নির্মল ছেত্রি
সমতলের সেই ‘অনুপ্রেরণা’ তাহলে পাহাড়েও চলে এল!
কয়েক মাস আগেই পাহাড়ে পুর নির্বাচন হয়ে গেল। মিরিকে তৃণমূল জয় পেয়েছিল। কিন্তু বাকি তিনটি পুরসভাতেই শোচনীয় পরাজয়। দার্জিলিংয়ে ৩২ টির মধ্যে শাসক দল পেয়েছিল মাত্র ১ টি। মোর্চা একাই পেয়েছিল ৩১ টি। সমতলের মতো অবাধে ভোট লুঠ হয়েছে, এমনটাও বলা যাবে না। কারণ, রাজ্যের জোরাজুরিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই ভোট হয়েছে।
কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই তা বেদখল হতে বসেছে। কার্শিয়াং বিনয় তামাংদের দখলে চলে এসেছে। দার্জিলিংও তাই। কালিম্পংও যে কোনও সময়েই এসে যাবে। দল ভাঙনোর এই রোগটা এসেছে মূলত সমতল থেকেই। সমতলে একের পর এক পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে শাসকপক্ষ। যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে জয় এসেছে, সেখানে বলার কিছু নেই। কিন্তু যেখানে এত কাণ্ডের পরেও জয় আসেনি, সেখানেও অন্যের বোর্ড ভাঙানোর চেষ্টা। যে জেলা পরিষদে মাত্র একজন সদস্য, সেই জেলা পরিষদেও কী অবলীলায় দখল নেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর থেকে জলপাইগুড়ি, মালদা থেকে মুর্শিদাবাদ। এ তো গেল জেলা পরিষদের কথা। অর্থাৎ, জেলা পরিষদের এই মুহূর্তে রাজ্য বিরোধীশূন্য। পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এই দলবদলটা আরও নির্লজ্জভাবে হয়েছে।
পাহাড়ে জোর জুলুম ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর এভাবে দখলদারি ছিল না। পাহাড়ে জুলুমবাজির দায় যদি বিমল গুরুংয়ের হয়, তবে বিনয় তামাংরাও সেই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। সেই বিনয় তামাংরা প্রতিটি পদক্ষেপে কার বা কাদের ইশারায় চলছেন, তাও বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দার্জিলিংয়ের দখল নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে জেলে ভরা হল। কার্শিয়াংয়েও তাই। ১০৫ দিনের বন্ধে অন্তত প্রথম দু মাস তো বিনয় তামাং–অনীত থাপারাও সঙ্গে ছিলেন। যা যা হিংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, তার কোনও প্রতিবাদ করেননি। আজ হঠাৎ অহিংসার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠলেন। ব্যাস, আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হল জিটিএ–র মাথায়। তিন পক্ষের চুক্তির মাধ্যমে জিটিএ তৈরি হয়েছিল। বাকি দুই পক্ষ নেই। একপক্ষ (রাজ্য ) একাই ঘোষণা করে দিল জিটিএ–র প্রশাসনিক প্রধান কে হবেন? রাজ্যের কি আদৌ এই এক্তিয়ার আছে? গুরুংয়ের পক্ষে আদালতে যাওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্র নীরবই থাকবে। তাই রাজ্য একতরফা ফতোয়া চাপিয়ে যাবে।
সামনে যতই বিনয় তামাংরা থাকুক, আড়াল থেকে কারা চালাচ্ছেন, সেটা সবাই বোঝেন। বিনয় তামাংরা যতই নিজেদের মোর্চা বলে দাবি করুন, তাঁদের তৃণমূলে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। দখলের এই ‘অনুপ্রেরণা’ যে এই সমতল থেকেই গিয়েছিল, সেদিন সেটা আরও স্পষ্ট হবে।