হ্যাঁ, গরুই আমাদের উপযুক্ত জাতীয় পশু

রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতির রায় শুনে এত হাসাহাসির কিছু নেই। তিনি যেটা বলেছেন, এমন অনেজ আজগুবি তত্ত্ব তো আমরাও বিশ্বাস করি। তিনি তো ঠিকই বলেছেন, গোমুখ্যুদের জাতীয় পশু গরুই হওয়া উচিত। লিখেছেন অরুণোদয় সাহা।  

রাজস্থানের এক বিচারপতি ময়ূর-ময়ূরীর মিলন নিয়ে দুনিয়া কাঁপানো এক তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তাই নিয়ে ফেসবুকে হিহি, হোয়াটস্যাপে হাহা, কাগজে- টিভিতে হোহো। যেন বিচারপতিটি এক জোকার। তিনি এমন এক বোকা বোকা কথা বলেছেন যা শুনে হাসি চেপে রাখা দায়। আমরা মহাবুদ্ধিমানরা হাসছি আর ভাবছি, একবিংশ শতাব্দীর মানুষ এমন গবেটমার্কা কথা বললেন কী করে? উনি কি সত্যিই শিক্ষিত?

goru

কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখুন তো, আমরা যারা বিচারপতিকে নিয়ে হাসাহাসি করছি তাঁদের বুদ্ধির দৌড়ও কি ওই বিচারপতির মতোই নয়? আমরাও তো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে হনুমান এক লাফে সাগর পেরতে পারে। আমরাও তো বিশ্বাস করি যে ডানাওয়ালা ঘোড়ার পিঠে চেপে একরাতের মধ্যে মক্কা থেকে জেরুজালেম গিয়ে আবার ফিরে আসা যায়।

বিচারপতিকে নিয়ে হাসাহাসি করার আগে, একবার দেবতা বিষ্ণুর দিকে তাকান। তার কীর্তিগুলির কথা ভাবুন। কূর্ম অবতারে, তিনি কচ্ছপের রূপ ধারন করলেন। তাঁর পিঠে মন্দার পর্বতকে রাখা হল। সেই পর্বতের গায়ে বাসুকি নাগকে জড়িয়ে সমুদ্রমন্থন করা হল। মন্থনের ফলে সাগর থেকে উঠে এল চাঁদ। হ্যাঁ পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ উঠে এল সমুদ্র থেকে।

বরাহ অবতারে তিনি পৃথিবীকে সাগরে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে উদ্ধার করলেন। পৃথিবীর বুকে থাকে যে সমুদ্র, সেই সমুদ্রে ডুবে গেল পৃথিবী। বরাহদেব, তাঁকে আবার জলের উপরে তুলে আনলেন। হয়গ্রিব অবতারে তিনি সমুদ্রের গভীরে গিয়ে, মধু এবং কৈটভ নামে দুই দৈত্যকে বধ করলেন। তাদের চর্বি থেকে তৈরি হল পৃথিবী। পৃথিবীর বুকে সমুদ্র, সেই সমুদ্রের বুকে চর্বি জমে তৈরি হল পৃথিবী।

আমরা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, মঙ্গলগ্রহে রকেট পাঠানো দেশের মানুষ, এই সব শাস্ত্র কথা তো আমরা বিশ্বাস করি। তাহলে ময়ূরের চোখের জল পান করে ময়ূরী গর্ভবতী হয়, এটা মানতে আমাদের যুক্তিতে আটকাচ্ছে কেন?
বিচারপতির কথা শুনে হাসি পেলে, নিজেদের দিকে তাকিয়ে হাসছি না কেন?

আসুন আমরা নিজেদের নিয়েও হাসাহাসি করি। আর দাবি তুলি গরুকেই জাতীয় পশু করতে হবে। কারণ, বাঘ একটি তেজস্বী, বুদ্ধিমান প্রাণী। তার সঙ্গে আমাদের কোনও মিল নেই। গোমুখ্যুদের জাতীয় পশু গরুই হওয়া উচিত।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.