কোথায় যেতে হয়, কোথায় যেতে নেই, সৌমিত্র জানেন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গবিভূষণ নিয়েছেন। এবার তাঁকে তৃণমূলি বানিয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টা হবে। অতি বাম বন্ধুরা সোশাল মিডিয়ায় বিপ্লবের ঝড় তুলবেন। সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়া মানেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া নয়, এই বোধটুকুও অনেকে হারিয়ে ফেলবেন। লিখেছেন রাহুল বিশ্বাস।।  ‌
এবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দিকে নানা কটাক্ষ ধেয়ে এল বলে!‌ এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী দু–‌তিনদিন সোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখুন। নিশ্চিতভাবেই আরও দেখতে পাবেন। অতি উৎসাহীরা তাঁকে ‘‌তৃণমূলি’ তকমা এঁটে দিলেন বলে!‌ এখানেই থেমে থাকবে, এমনটা ভাববেন না। আরও কত বিশেষণ উঠে আসবে।

তাঁর অপরাধ!‌ তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গবিভূষণ পেলেন। নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সেই পুরস্কার গ্রহণ করলেন। এঁর আগে যাঁরা যাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের অনেককেই শাসকদলের মিছিলে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অহেতুক স্তাবকতা করতেও দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ স্তাবকতা করে পুরস্কার পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ পুরস্কার পেয়ে কৃতজ্ঞতায় স্তাবকতা করেছেন। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজেদের এসব থেকে দূরেই রেখেছেন। সরকারি অনুষ্ঠানে এলেও দলীয় অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন।

soumitra5

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কেন আগে পাননি, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাই বলে কেন পুরস্কার পেলেন, দোহাই এই প্রশ্ন তুলবেন না। তাঁর পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকতে পারে না। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান কী, তা নিয়েও কোনও ধোঁয়াশা নেই। এটা জানার পরেও তাঁকে পুরস্কার দিয়ে সরকার উদারতারই পরিচয় দিয়েছে। যেটা ভাল, সেটা স্বীকার করতে কুণ্ঠা থাকা উচিত নয়। কিন্তু কিছু অতি বামপন্থী আছেন। যাঁরা সবকিছুর মধ্যেই শাসক দলের দালালি খুঁজে পান। কেউ সরকারি অনুষ্ঠানে গেলেই আওয়াজ তোলা হয়, বিক্রি হয়ে গেলেন। নানা কার্টুন ঘুরে বেড়ায়।

এভাবেই বারবার তৃণমূল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রসেনজিৎকে। হ্যাঁ, তিনি কয়েকটা সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। বেশ করেছেন। যেখানে সরকারি উদ্যোগে স্টুডিও সংস্কার ও উদ্বোধন হচ্ছে, সেখানে টলিউডের একজন নায়ক হিসেবে হাজির থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। শিল্পীদের দাবিদাওয়া নিয়ে নবান্নেও গিয়েছেন। কিন্তু কখনও কোনও দলীয় অনুষ্ঠানে প্রসেনজিৎকে দেখেছেন?‌ ব্রিগেডে দেখেছেন?‌ মিছিলে দেখেছেন?‌ ভোট প্রচারে দেখেছেন?‌ এত এত শিল্পী হাজির হয়ে যাচ্ছেন, মিছিলে হাঁটছেন, সেখানে তিনি আসছেন না। ভেবে দেখেছেন এই লড়াইটা কতটা কঠিন?‌ তাঁর কাছে কি হাজির থাকার ‘‌আমন্ত্রণ’ আসেনি?‌ নিশ্চয় এসেছিল। কিন্তু তিনি জানেন, কোথায় যেতে হয়, কোথায় যেতে নেই। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও জানেন। নিশ্চিত থাকুন, পুরস্কার পেলেও বাকিরা যেমন শাসক দলের মঞ্চে উঠে গিয়েছেন, সৌমিত্রকে কোনওদিনও সেই ভূমিকায় দেখতে পাবেন না। যেখানে প্রতিবাদ দরকার, পিছিয়েও থাকবেন না। তবে আপনার ভাষা আর তাঁর ভাষা এক হবে, এমন আশা না করাই ভাল।
তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কোথায় যেতে হয়, কোথায় যেতে নেই, তিনিই সবথেকে ভাল জানেন।

HappyHomes_Stripe

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.