অধীর যদি বিজেপি–‌তে আসেন!‌

সরল বিশ্বাস

কয়েকদিন ধরেই বাজারে জোর গুজব, অধীর চৌধুরি নাকি বিজেপিতে আসতে পারেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি কিনা চলে যাবেন বিজেপিতে!‌ শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে মোড় নিচ্ছে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। সবার উপরে সংখ্যা সত্য, তাহার উপরে নাই। মমতার সঙ্গে লোকসভায় ৩৪ এম পি, রাজ্যসভায় ১২। কয়েকদিন পর সংখ্যাটা ১৩ হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে ৪৭ খানা এমপি (‌কুণাল ঘোষকে যদি হিসেবের বাইরে রাখেন, তাহলেও ৪৬)‌। এই ৪৬ এমপি–‌র দল দিল্লিতে গুরুত্ব পাবেই। রাজ্যে যতই কংগ্রেসের লোককে তৃণমূলে নিন, দিল্লির কংগ্রেসের কাছে এসবের তেমন গুরুত্ব নেই। সোনিয়া গান্ধীরা বোঝেন ৪৬ খানা এম পি। মোদি বিরোধী জোট গড়তে গেলে মমতাকে চাই। তাতে অধীরবাবুদের গোঁসা হলেও কিচ্ছু করার নেই।
অন্যদিকে, অধীর চৌধুরির রাগ হওয়াটাও স্বাভাবিক। চোখের সামনে কংগ্রেসকে শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের জেলা মুর্শিদাবাদেও একের পর এক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদও ছিনিয়ে নিল শাসক দল (‌তাও আবার ভোটে না জিতে)‌। বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দলের সঙ্গে জোট!‌ এবার তো কে কংগ্রেসের সভাপতি হবেন, কে রাজ্যসভায় যাবেন, কে বিরোধী দলনেতা হবেন, তাও মমতাই ঠিক করে দেবেন। এই অবস্থায় যে কোনও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষের যা প্রতিক্রিয়া হয়, অধীরের তাই হচ্ছে। দিল্লিকে হুশিয়ারি দিয়েছেন, মমতাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না। যদিও তাতে কোনও ফল হবে বলে মনে হয় না। দশ জনপথের কাছে মমতার গুরুত্ব ক্রমশ বাড়বে।
তাহলে, অধীরের সামনে কোন রাস্তা খোলা রইল?‌ বামেরা তো আর জামাই আদর করে অধীরকে নেবেন না। তাহলে, বিজেপি তে যাওয়া ছাড়া আর উপায় কী?‌
কিন্তু যদি তিনি বিজেপিতে আসেন, কী কী সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে, একবার চোখ বোলানো যাক।

rahul, adhir১)‌ বিজেপিতে যোগ দিলে সাংসদ পদ ছাড়তে হবে। কারণ, রাজ্য বিধানসভায় স্পিকার যতটা নির্লজ্জভাবে দলত্যাগীদের আড়াল করেন, লোকসভায় সেটা সম্ভব নয়। সাংসদ পদ ছাড়ার ঝুঁকি নেবেন অধীর?‌
২)‌ অধীর গেলেই সব অনুগামীরা যাবেন, এমন ভাবার কারণ নেই। কেউ কেউ তৃণমূলেও ভিড়ে যাবেন।
৩)‌ বিজেপিতে তাঁর ভূমিকা কী হবে?‌ রাহুল সিনহা বা দিলীপ ঘোষদের অধীনে কাজ করবেন?‌ চারবারের এমপি অধীর প্রথমবার বিধায়ক হওয়া দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব মানবেন?‌
৪)‌ ধরা যাক, অধীরকেই রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব দেওয়া হল। তাঁর নেতৃত্ব বিজেপি রাজ্য নেতারা মানবেন?‌
৫)‌ মমতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে সোনিয়ার ওপর না হয় গোঁসা করলেন। কিন্তু মোদির কাছেও কিন্তু সংখ্যাটাই বড়। তিনি যদি মমতাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন!‌ যদি সারদা–‌নারদা আরও বেশি করে হিমঘরে চলে যায়!‌ যদি লোকসভায় মমতার সমর্থন নিয়েই সরকার গড়ার পরিস্থিতি আসে?‌ নিশ্চিত থাকুন, বিজেপি সে সুযোগ ছাড়বে না। মমতাকে পাশে পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তাই তাই করবে। সোনিয়া যেমন রাজ্য কংগ্রেসকে পাত্তা দিচ্ছেন না, তেমনি মোদি–‌অমিত শাহরাও বাংলার নেতাদের মতামতকে পাত্তাই দেবেন না। এবং মমতাও বিজেপিকে সমর্থন করার ব্যাপারে খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না। এমনকী কেন্দ্রে তৃণমূলের কয়েকজন মন্ত্রীও থাকতে পারেন।
তখন অধীরবাবু কার ওপর রাগ করে কোথায় যাবেন?‌

HappyHomes_Stripe

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.