ডা. শান্তনু মাজি
সব নার্সিংহোমের রেট কি কমে যাবে? নাকি অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে? সাধারণ রোগীকে ভয় দেখিয়ে আইসিইউ–তে ঢুকিয়ে দেওয়া? হয়ত সবকিছুই আগের মতোই থাকবে। তবু মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে প্রশংসা না করে পারছি না।
আমি কস্মিনকালেও তৃণমূল নই। বরং তাঁদের তীব্র সমালোচক। কিন্তু সবক্ষেত্রেই বিরোধিতা করতে হবে, এই নীতিতেও বিশ্বাস করি না। অন্তত এই ক্ষেত্রে আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে সমর্থন করি। সার্বিকভাবে নার্সিংহোম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল নয়। মানুষ অসহায় হয়ে ডাক্তারদের কাছে আসেন। ডাক্তাররা যদি সেই অসহায়তার সুযোগ নেন, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
কিন্তু শহরের অধিকাংশ বড় হাসপাতালে সেটাই হয়ে থাকে। মানছি, নার্সিংহোম ব্যবসা করতেই এসেছে। কিন্তু মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে এমন নির্মম ব্যবসা করা উচিত কিনা, তা নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমরা মফস্বলে চিকিৎসা করি। একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষেরা আসেন। তাঁদের এটা সেটা পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য নেই। কিছুটা অভিজ্ঞতা ও অনুমানের ভিত্তিতেও অনেক সময় ওষুধ দিতে হয়। আবার যখন জটিল কিছু মনে হয়, তখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে যেতে বলি। অনেকেই চেনা–পরিচিতদের সাহায্যে কলকাতা ও বড় শহরে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল হয় না। ফিরে এসে অনেকেই জানান। বড় বড় সব ডাক্তার। তাঁদের ভুল ধরব, এমন যোগ্যতা আমার নেই। তবু প্রেসক্রিপশন দেখে বুঝতে পারি, অহেতুক হয়রানি করা হয়েছে। হয়ত দুটো টেস্ট দিলেই চলত, দেওয়া হয়েছে সাতটা। দুটো ওষুধ দিলেই চলত, তিনরকম এক্সট্রা ওষুধ গুঁজে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অহেতুক অপারেশন হয়েছে। যেটা হয়ত অনায়াসেই এড়ানো যেত। নিজে ডাক্তার হয়ে তখন নিজেকেই খুব ছোট মনে হয়।
এর সত্যিই একটা বিহিত হওয়া দরকার ছিল। রাশ টানা দরকার ছিল। ঠিক সেটাই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব নার্সিংহোমগুলি সুবোধ বালক হয়ে উঠবে, এতখানি আশাবাদী আমি নই। কিন্তু প্রকাশ্যে এই তিরস্কারটাও দরকার ছিল। মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হবে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও কিছুটা চাপে থাকবেন। আমার পরামর্শ, কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি হোক। কোনও রোগীর অভিযোগ থাকলে তাঁরা দ্রুত সেখানে নালিশ করতে পারবেন। সাতদিনের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হোক। প্রয়োজনে সেই নার্সিংহোমকে জরিমানা করা হোক। তাহলে রোগীদের এভাবে হেনস্থা করার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে।