নন্দ ঘোষের কড়চা
নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। রাস্তার দুপাশে কাশের বন। তার ওপর উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ফড়িং। কুমোরটুলিতে ঠাকুরের কাঠামোয় মাটি পড়েছে। দর্শকদের মাথায় কালো কালো ছাতা। যদি কোনও ফুটবল ম্যাচের রিপোর্টে এইসব বাক্য দেখতে পান তাহলে নিশ্চিত বুঝবেন সেটা রূপায়ন ভট্টাচার্যের লেখা। ম্যাচ রিপোর্টে খেলার বর্ণনা থাকে। কিন্তু রূপায়নবাবুর রিপোর্টে থাকে প্রকৃতির বর্ণনা। পড়লে মনে হয়, দ্বিতীয় বিভূতিভূষণ। ভুল করে সাংবাদিকতায় এসে পড়েছে, সুযোগ পেলে আর একটা পথের পাঁচালি লিখত। স্কুলের নিচু ক্লাসে ‘শরৎ কালের বর্ণনা ’ রচনা লিখতে দেয়। যদি কোনও ছাত্র রূপায়নের ম্যাচ রিপোর্ট হুবহু টুকে দেয়, সে অনেক নম্বর পাবে।
রূপায়নবাবু যতদিন আনন্দবাজারে ছিলেন, এইসব ফুল-পাখি-চাঁদ করে চালিয়ে গেছেন। ম্যাচের ফল কী হল? কে গোল করল? কেমন করে গোল করল? এসব প্রশ্নের উত্তর তাঁর রিপোর্টে সহজে পাওয়া যেত না। বেশ কয়েক বছর হল তিনি আনন্দ বাজার ছেড়ে ‘এই সময়’ এর ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছেন এবং এখানে তিনি নতুন এক পরীক্ষা নিরীক্ষা আরম্ভ করেছেন।
‘এই সময়’এর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই, তাঁর মাথায় ঢুকেছিল বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরা মোহনবাগান– ইস্টবেঙ্গলের থেকে চেলসি, বায়ার্ন নিয়ে বেশি আগ্রহী। তাই কাগজ ভরে থাকত কেবলই বিদেশি ফুটবলের খবর। তারপর বোধহয় উপরওয়ালাদের ধাতানি খেয়ে ঘরোয়া ফুটবলের খবর দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু যেদিন রূপায়ন নিজে কলম ধরেন সেদিনই হয় কেলো। লেখার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় কলকাতার দুই বড় ক্লাবের নিন্দা। দেখুন মশাই, কলকাতার ক্লাব ফুটবলে অনেক কিছু নেই সেটা সবাই জানে। কেন নেই সেটাও জানে। স্পন্সর নেই, সরকারি উদ্যোগ নেই, টুর্নামেন্টগুলোর প্রচার নেই, দেশের অধিকাংশ রাজ্যে ফুটবল সংস্কৃতিই নেই, কর্তাদের পেশাদারিত্ব নেই। এত কিছু নেই নিয়ে চেলসি, বায়ার্ন হওয়া যায় না। ঠিক যেমন ফুল-পাখি-চাঁদের বর্ণনা লিখে স্পোর্টস রিপোর্টার হওয়া যায় না। কথায় কথায় তো বিদেশি ক্লাবের কথা বলেন। নিজে একটু বিদেশি কাগজগুলোর কথা ভাবুন। স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ডের কাগজে এই সব আলতু ফালতু ম্যাচ রিপোর্ট লিখলে পরদিনই ঘাড়ধাক্কা দেবে। আগে নিজে ভালো ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে শিখুন, তারপর মোহনবাগান –ইস্টবেঙ্গলকে বিশ্বমান শেখাতে আসবেন।
(ঠিক বেলা বারোটা। নন্দ ঘোষ একেক দিন একেকজনের বারোটা বাজাবেন। তাঁর হাত থেকে কারও রেহাই নেই। সোমবার তাঁর সম্ভাব্য শিকার কে? কাল কার জন্মদিন? ভেবে নিন। আর অপেক্ষা করুন সোমবার ঠিক বেলা বারোটা পর্যন্ত)।