সজল মুখার্জি
আমাদের বেড়ে ওঠা আটের দশকে। তখন টিভিতে জুলাই মাস মানেই উত্তম কুমার। সপ্তাহে একদিন বাংলা ছবি। নিজেদের বাড়িতে টিভিও ছিলাম না। পাড়ায় এর-ওর বাড়িতে ভিড় করতাম। তখন কোনও বাছবিচারও ছিল না। যা পেতাম, তাই দেখতাম।
সেই তখনই প্রথম দেখা অগ্নীশ্বর। ক্লাস থ্রি-ফোরে যেমন বোঝার কথা, ততটুকুই বুঝেছিলাম। পরে আরও কয়েকবার দেখেছি। শেষবার দেখলাম গত সপ্তাহে। যতবার দেখি, নতুন মনে হয়। একজন ডাক্তারের জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত কী সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে তিনি তথাকথিত নায়ক নন। নায়িকার সঙ্গে তথাকথিত প্রেমের কাহিনিও নয়। কিন্তু একেক বাঁকে একে অদ্ভুত এক ভাল-লাগা। একই ব্যক্তি, কত ভিন্ন সত্ত্বার স্রোত।
একজন চিকিৎসের জীবন কেমন হওয়া উচিত, তার আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে ছবিটা। কিন্তু এই প্রজন্মের চিকিৎসকরা কি ছবিটা দেখেছেন ? দেখলে অন্তত কিছুটা মূল্যবোধ তৈরি হত। তাহলে ডাক্তারখানাগুলো কসাইখানা হত না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতাম, সব ডাক্তারের বছরে দুবার করে অগ্নীশ্বর দেখা বাধ্যতামূলক করতাম। ডাক্তারি ক্লাসের প্রথম দিন বলতাম, বাকি শিক্ষা পরে হবে, আগে সবাই অগ্নীশ্বর দেখো। ওটা দেখলেই ডাক্তারির অনেকটা শেখা হয়ে যাবে। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও আসত অগ্নীশ্বর থেকে।
জানি, আমাদের এই যান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় এসব কথার কোনও মূল্য নেই। নম্বর ভিত্তিক আর ডোনেশন ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় এর থেকে ভাল আর কী আশা করা যায়? ছাত্রদের কথা ছেড়ে দিলাম। স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী, আমলারা ছবিটা দেখেছেন তো ?
মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ, আপনি নিজে একবার অগ্নীশ্বর দেখুন (হয়ত আগে দেখেছেন, তবু আবার দেখুন)। তারপর আপনার দপ্তরের কর্তাদের দেখতে বলুন। নির্দেশ দিন, ডাক্তারির সব ছাত্রকে যেন অগ্নীশ্বর দেখানো হয়। উত্তম কুমারের নামে একটা মেট্রো স্টেশন করার থেকে এটা অনেক বেশি জরুরি।
(বেঙ্গল টাইমস। উত্তম কুমার বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত। এরকম নানা স্বাদের পনেরোটি লেখা নিয়ে বিশেষ সংকলন। বেঙ্গল টাইমসের ওয়েবসাইট থেকে পড়তে পারেন। নিচের লিঙ্কে ক্লিক করেও পুরো পত্রিকাটি পড়তে পারেন।
https://www.bengaltimes.in/mahanayak/mahanayak.pdf )