দোহাই, বিভূতিভূষণকে শান্তিতে থাকতে দিন

নন্দ ঘোষের কড়চা

হঠাৎ নন্দ ঘোষ জানতে পারলেন, বিভূতিভূষণের জন্মদিন। অনেকেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কিন্তু নন্দ ঘোষ তো আবার প্রশংসা করতে পারেন না। তাহলে কী করে শ্রদ্ধা জানাবেন? নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে নিলেন। বিভূতিভূষণের জন্মদিনে তিনি বেছে নিলেন এক চিত্র পরিচালককে।

বিধানচন্দ্র রায় ব্যতিক্রম। আরও দু একজন হয়ত ব্যতিক্রম। বাদবাকিরা সব এক ক্যাটাগরির। যখনই দেখবেন, একজন ডাক্তার ডাক্তারি ছেড়ে অন্য কিছু করছে, তখন বুঝবেন সে ডাক্তারিটা ভাল করে শেখেনি। রোগী আসছে না, মাছি তাড়াচ্ছে। তাই সে কখনও ভোটে দাঁড়িয়ে যায়, কখনও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হয়ে যায়, আবার কখনও চিত্র পরিচালক হয়ে যায়।

nanda ghosh logo
আমাদের কমলেশ্বরের বোধ হয় তেমন দশাই হয়েছে। কমলেশ্বর মানে, আমাদের কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তিনি নাকি দারুণ এক বুদ্ধিজীবী। অভিনব বিষয় নিয়ে নাকি সিনেমা বানাচ্ছেন। যাকে ধরছেন, তাঁর পিন্ডি চটকাচ্ছেন। তিনি বানালেন মেঘে ঢাকা তারা। সেটা নাকি ঋত্বিক ঘটকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। এমন শ্রদ্ধার নমুনা, কিছু বোঝাই গেল না। ঋত্বিক বেঁচে থাকলে বাংলা খেয়ে নির্ঘাত কিছু দারুণ বাক্যালঙ্কার উপহার দিতেন।
শান্তি হল না। তিনি এবার চললেন আফ্রিকায়। চাঁদের পাহাড় বানাবেন। এমন বানালেন, বিভূতিবাবু বেঁচে থাকলে আত্মহত্যা করতেন। শুধু বিভূতিবাবু কেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন, জঙ্গলের অনেক অ্যানাকোন্ডা বা সিংহেরা আত্মহত্যা করতে শুরু করেছে। দেব-এর হাতে আমাদের এভাবে মরতে হবে ? কে সহ্য করবে বলুন তো ? জঙ্গলের পশু বলে কি ওদের মান-সম্মান নেই ?
এবার ক্ষত। এটা নাকি সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে থাকা সিনেমা। যাঁরা দেখেছেন, হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন। যাঁরা দেখেননি, তাঁদের অন্তত কিছু সময় ও অর্থ বেঁচে গেল। প্রমোশনের সময় ভাল ভাল কথা বলতে হয়। প্রসেনজিৎ-পাওলিরাও বললেন। কিন্তু কয়েকবছর পর যদি সেরা ছবির তালিকা বাছতে বলা হয়, প্রসেনজিৎ নিশ্চয় প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে এই ছবিকে রাখবেন না।

kamaleswar

এখানেও শান্তি হল না। তিনি এলেন মহানায়ক সিরিয়ালের ধারণা নিয়ে। প্রসেনজিৎ যদি সারা জীবনে নিজের কোনও কাজ নিয়ে অনুতপ্ত থাকেন, তবে তা হল এই মহানায়ক। প্রতি এপিসোডেই নতুন নতুন বিকৃতি। রিসার্চের নামে যতসব গাঁজাখুরি। বড় বড় লোককে শ্রদ্ধা জানানোর নামে এমন পিন্ডি চটকানো কেন বাপু ?
এতেও তাঁর শান্তি হল না। এবার তিনি হাত দিয়েছেন চাঁদের পাহাড় টু বানাবেন বলে। আমি নন্দ ঘোষ। লোককে গালাগাল দেওয়াই আমার কাজ। প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি, কাউকেই ছাড়ি না। রবি ঠাকুরকেও গালমন্দ করি। সেই আমিও বিভূতিভূষণকে গালাগাল দিই না। ঋষিতূল্য একজন মানুষ। যিনি পথের পাঁচালি লিখেছেন, যিনি আরণ্যক লিখেছেন, তাঁকে ছোট করতে নেই, এটা আমার মতো মূর্খ লোকও বোঝে। কিন্তু কমলেশ্বর মুখুজ্যের মতো প্রাক্তন ডাক্তার বা নব্য বুদ্ধিজীবীরা বোঝে না। একটা চাঁদের পাহাড় বানিয়ে তৃপ্তি হল না ? প্রোডিউসারের টাকা পেয়ে যা খুশি, তাই করবেন ? দেবকে নিয়ে এবার চললেন আমাজনের জঙ্গলে। ভয়ে সেই পশুপাখিরাই জঙ্গল ছেড়ে চলে গেল। তারপর নাকি শুটিং হয়েছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। এখানে নাকি আমাজনের ছায়া পাওয়া গেছে।
আসলে, প্রোডিউসার দেরীতে হলেও বুঝেছেন, এর পেছনে টাকার শ্রাদ্ধ করার কোনও মানে হয় না। তাই আমাজন থেকে একলাফে পুরুলিয়ার অযোধ্যায়। ধুমধাম করে ছবিটা রিলিজ হবে। সবচেয়ে যে মানুষটা কষ্ট পাবেন, তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে মনে বলবেন, আমার ছবি সত্যজিৎ রায় বানিয়েছিলেন, এখন আমার এমন দুর্গতি, এইসব লোকগুলো আমাকে নিয়ে যা পারছে, তাই করছে। তাঁর এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি-র মতো অবস্থা।

তাই যাঁরা বিভূতিবাবুকে শ্রদ্ধা করেন, তাঁরা দয়া করে কমলেশ্বরবাবুকে বোঝান। এক কাজ করুন, সবাই মিলে কমলেশ্বর মুখুজ্যেকে একটা চেম্বার খুলে দিন। তিনি আবার মন দিয়ে রোগী দেখুন। তাঁর হতাশা কিছুটা কাটবে। কোন রোগীর কী দুর্গতি হবে জানি না। অন্তত বিভূতিভূষণ বেঁচে যাবেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.