নন্দ ঘোষের কড়চা
(যত দোষ, নন্দ ঘোষ। এতদিন সবাই সব ব্যাপারে নন্দ ঘোষকেই দায়ী করে এসেছেন। এবার তাঁর পালা। এবার তিনি হাজির অন্যের দোষ খুঁজতে। একেকদিন তাঁর নিশানায় একেকজন। আজ তাঁর নিশানায় জ্যোতি বসুর পুত্র চন্দন বসু। এই লেখাটি লিখেছেন ময়ূখ নস্কর।।)
উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে দাঙ্গার পর যথাযথ ত্রাণের ব্যবস্থা না করে সরকার বলিউড তারকাদের নিয়ে নাচগানের উৎসব করেছিল। অন্য অনেক নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে আলিয়া ভাটও সেই উৎসবে নাচতে গিয়েছিলেন। আলিয়ার বিখ্যাত পিতা মহেশ ভাট সেই সংবাদে বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, “ I am failed as a father.” অর্থাৎ বাবা হিসাবে আমি ব্যর্থ হয়েছি।
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর একমাত্র সুপুত্র চন্দন বসুর কীর্তি দেখে মহেশ ভাটের এই উক্তিটি মনে এল। নেতা হিসাবে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জ্যোতিবাবু সফল না ব্যর্থ, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সেই প্রসঙ্গে ঢুকতে চাই না। কিন্তু পিতা হিসাবে তিনি সফল না ব্যর্থ সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।
চন্দন বসু, জ্যোতিবাবুর এক মাত্র সন্তান। তিনি ব্যর্থ পিতার সফল পুত্র নাকি সফল পিতার ব্যর্থ?

জ্যোতিবাবুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পুত্রকে অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তুলেছেন। সেসব অভিযোগের সত্যি মিথ্যা নিয়েও মাথা ঘামাতে চাই না। কিন্তু প্রত্যেক পিতার দায়িত্ব থাকে নিজের সদগুণগুলি সন্তানকে দান করা, সেই কাজটি কি জ্যোতিবাবু করেছিলেন?
কয়েকদিন আগে চন্দন বসু ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে কালীঘাটের মন্দিরে ২ কেজি ওজনের সোনার খাঁড়া দান করেছেন। জ্যোতি বসু ছিলেন কমিউনিস্ট। দেব-দেবী এবং ধর্মাচরণে অবিশ্বাসী। কিন্তু তাঁর পুত্র ধর্মে বিশ্বাস করেন। করতেই পারেন। বাবা নাস্তিক বলে ছেলেকেও তাই হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও অধিকার আমাদের নেই। প্রশ্ন ওই সোনার খাঁড়া নিয়ে।
আপনারা বলতেই পারেন, চন্দনবাবুর টাকা নিয়ে চন্দনবাবু কী করবেন তা নিয়ে আপনি কথা বলার কে? ঠিকই। কিন্তু যেহেতু চন্দনবাবুর নামের সঙ্গে জ্যোতি বসুর নাম জড়িয়ে আছে এবং তিনি একজন ঘোষিত কমিউনিস্ট ছিলেন তাই কিছু কথা মুখে এসে যায়।
চন্দনবাবু, কমিউনিজমকে শ্রদ্ধা না হয় নাই করলেন, কিন্তু নিজের পিতাকেও কি শ্রদ্ধা করেন না? করলে মা কালীর পিছনে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ কী করে করলেন? দেবীকে ভক্তি জানানোর অন্য কোনও উপায় ছিল না? “পিতা প্রীত হলে সকল দেবতা প্রীত হন“ এটা কি আপনি জানেন না?
আপনি যদি ওই টাকা পার্টি ফান্ডে দান করতেন তা হলে আপনার পিতার আত্মা প্রীত হত। আর পিতা খুশি হলে কালী নামক দেবীটিও খুশি হতেন। যদি রাজনীতির ছায়া মাড়াতে আপনার আপত্তি থাকে, তাহলে ওই টাকাটি কামদুনি বা কাকদ্বীপের হতভাগ্য যুবতীদের পরিবারকে দিতে পারতেন। অন্তত কিছুটা দিতে পারতেন। মা কালী বলে কেউ থাকলে তিনি দুহাত তুলে আপনাকে আশীর্বাদ করতেন। তিনিও তো একজন নারী।
আচ্ছা বেশ! ধরে নিলাম আপনি সমাজতন্ত্র, সমাজসেবা কোনটাই করবেন না। কিন্তু আপনি তো একজন ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসার এমনই অবস্থা যে অধিকাংশ লোক জানেই না আপনি কীসের ব্যবসা করেন। যদি এই ৫০ লক্ষ টাকা ব্যবসার কাজে লাগাতেন তাহলে টাকাটা সৎকাজে ব্যয় হত। সোনার খাঁড়াটা কোন কাজে লাগল শুনি?
আপনার পিতা যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন মাধ্যমিকে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা পড়ানো হত সেখানে মন্দিরে ধনরত্নের অর্ঘ্য দেখে দেবতা বলেছিলেন, “দীনশক্তি যে ক্ষুদ্র কৃপণ নাহি পারে গৃহ দিতে গৃহহীন নিজ প্রজাগণে সে আমারে গৃহ করে দান!’”
সেই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছিলেন, দেবতার সামনে বৈভবের প্রদর্শন না করে প্রজাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। জ্যোতি বসুও হয়তো সেই কথাই মানতেন, নইলে এমন কবিতাকে সিলেবাসে জায়গা দিয়েছিলেন কেন?
কিন্তু হায়, প্রদীপের তলাতেই জমাট অন্ধকার। ভাগ্যিস পরলোক বলে কিছু নেই, আত্মা বলে কিছু নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো জ্যোতি বসুর আত্মা পরলোকে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করত।
(এটি একটি ওপেন ফোরাম। মতামতের জন্য বেঙ্গল টাইমস দায়ী নয়। আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নন্দ ঘোষ। কারও বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে চাইলে, নির্দ্বিধায় করতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)

