একটা সময় ছিল, যখন বাঙালির ঘরে ঘরে দেখা যেত পুজো সংখ্যা। বাঙালি যেমন পুজোয় নতুন জামাকাপড় কিনত, তেমনই কিনত পুজো সংখ্যা।
এবার পুজো অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। বেশ কয়েকটি পুজো সংখ্যা যথারীতি বাজারে এসেও গেছে। কিন্তু এখনও বাঙালির বাড়িতে সেভাবে পুজো সংখ্যা চোখে পড়ছে না। এটা শুধু এবারের ছবি, এমন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই পুজো সংখ্যার প্রতি এই অনীহা চোখে পড়ছে।
তাহলে কি পুজো সংখ্যাগুলোর মান পড়ে গেছে? আগের মতো সেই মানের লেখা আর হচ্ছে না? কেউ কেউ এমন একটা ব্যাখ্যা তুলে ধরতেই পারেন। কিন্তু তাতে আসল সত্যিটা আড়ালেই থেকে যাবে। পুজো সংখ্যার মান কেমন হচ্ছে, সেটা বড় প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হল, আমাদের মধ্যে কি আদৌ আর আগের মতো পড়ার ধৈর্য আছে?
অনেকে বলবেন, সময় নেই। এক্ষেত্রেও একমত হতে পারছি না। যিনি বলছেন, সময় নেই, তিনি কিন্তু স্মার্টফোনে দিনে অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছেন। বা হয়তো আরও বেশি। অর্থাৎ, স্মাটফোনে মগ্ন থাকার সময় আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকার সময় আছে। কে কী ছবি পোস্ট করল, কে কী কমেন্ট করল, সেসব দেখার পর্যাপ্ত সময় আছে। সময় নেই শুধু পুজো সংখ্যা পড়ার।
বাবা–মায়েরা অনেক সময় অভিযোগ করেন, ছেলে সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যস্ত। পড়তে চায় না। খেতে খেতেও মোবাইল দেখে। একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এই প্রজন্ম এই শিক্ষাটা কিন্তু বাড়ি থেকেই পেয়েছে। ছেলে যদি দেখে তার বাবা–মা সারাক্ষণ মোবাইল হাতে ব্যস্ত, তার মধ্যেও সেই প্রবণতাই তৈরি হবে। যদি দেখত, তার বাবা–মা বই পড়ছেন, ছেলেরও হয়তো বইয়ের প্রতি অনুরাগ তৈরি হত। ছেলের খাওয়ার সময় তার হাতে মোবাইল তো আমরাই তুলে দিয়েছি।
তাই পুজো সংখ্যা স্বাভাবিক নিয়মেই হারিয়ে গেছে। ছাপা হচ্ছে, স্টলেও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ নিশ্চয় কিনছেনও। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালির ঘরের বৈঠকখানায় আর তার জায়গা হচ্ছে না। পুজো সংখ্যা বা লেখার মানকে দায়ী করে লাভ নেই। সমস্যা অনেক গভীরে।
