রবি ঠাকুরের লেখা পড়ি আর নাই পড়ি, তাঁর বিয়ে নিয়ে, বউ নিয়ে, চরিত্র নিয়ে আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। রবীন্দ্র জয়ন্তীতেও সেই কৌতূহল থেমে নেই। লিখেছেন ময়ূখ নস্কর।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার হিয়ায় চলছে রসের খেলা।’ তাঁর হৃদয়ে কী রসের খেলা চলত জানি না, কিন্তু তাঁকে ঘিরে আমাদের হিয়ায় নানারকমের রসের খেলা চলে। আমার জীবন থেকে তার কিছু নমুনা তুলে দিই।
তখন পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা হত। এমনই একটি অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলুম। পরদিন সকালে পাড়ার এক কাকিমা বললেন, এত কথা বললি, কিন্তু এটা তো বললি না যে রবীন্দ্রনাথ শালীকে বিয়ে করেছিল? বরাবরই দেখেছি, রবীন্দ্রনাথের অন্য কিছুতে আমাদের আগ্রহ না থাকুক, বউ আর বউদিকে নিয়ে আমাদের প্রবল আগ্রহ।
কিন্তু তাই বলে শালীকে বিয়ে? অবাক হয়ে তাকালুম। তিনি কাবুলিওয়ালা গল্পটি খুলে দেখালেন। মিনি তাঁর বাবাকে বলছে, … “বাবা, মা তোমার কে হয়।” মনে মনে কহিলাম শ্যালিকা; মুখে কহিলাম “মিনি তুই ভোলার সঙ্গে খেলা করগে যা।…”
এই লেখা থেকে কাকিমা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন রবীন্দ্রনাথ শালীকে বিয়ে করেছেন। মনে মনে কাকিমাকে প্রণাম করে বললাম, শালীকে বিয়ে করতে গেলে তো আগে আরও একটা বউ থাকতে হয়। কিন্তু রবি ঠাকুরের তো একটাই বিয়ে।
এই নিয়েও সমস্যায় পড়লাম বছর কয়েক পরে। তখন একটি বাচ্চা ছেলেকে পড়াই। স্কুলে হোমওয়ার্কে রবীন্দ্রনাথ রচনা লিখতে দিয়েছে। ছাত্রের বাবা এসে বলল, ‘রবীন্দ্রনাথের যে দুটো বিয়ে এটা কিন্তু রচনায় লিখতে হবে।’ প্রশান্তকুমার, বনফুল, জীবনস্মৃতি মনে মনে সব কিছু ঘাঁটতে লাগলুম, এমন তথ্য কোথায় আছে।
তখন ছাত্রের বাবা একটা রচনার বই নিয়ে এলেন। সেখানে লেখা আছে, “রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর নাম মৃণালিনী (পূর্বের নাম ভবতারিণী।)” ব্র্যাকেটের অংশটিতে হাত দিয়ে বললেন, ‘দেখলে তো মৃণালিনীদেবীর পূর্বে রবীন্দ্রনাথের ভবতারিণী বলে আরও এক স্ত্রী ছিল।’ নিজের ভাষাজ্ঞান সম্পর্কে হতাশ হয়ে, নিদারুণ হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম।
এই হতাশা কিছুটা কেটেছিল পরবর্তীকালে। কোচিংয়ে পড়ার সময় এক সহপাঠিনী বলেছিল, রবীন্দ্রনাথ লোকটি দুশ্চরিত্র। কারণ বউদির সঙ্গে..’ ইত্যাদি ইত্যাদি। শুনে অধ্যাপিকা বলেছিলেন, “এই পৃথিবীতে একটি জিনিস আছে,যা অত্যন্ত ভয়ংকরী।’
আচ্ছা আপনারা কারা কারা রবীন্দ্রনাথকে দুশ্চরিত্র মনে করেন?