ঋত, এমন মেয়ে আর পাবি না, একেই বিয়ে কর

‌ঋতব্রত পার্টির গোপন কথা রেকর্ড করেছিল। এই মেয়ে আরেক ধাপ ওপরে। তার অনেক আগেই ঋতব্রতর কাণ্ড কারখানা রেকর্ড করে বসে আছে। ঋত অডিও, এই মেয়ে ভিডিও। এই মেয়েই তার উপযুক্ত পাত্রী হতে পারে। এদিক–‌ওদিক না খুঁজে এই মেয়েকেই বিয়ে করা উচিত। লিখেছেন রবি কর। 

ভগবানের লীলা কে বুঝতে পারে? যে সারা বছর ঠাকুর ঠাকুর করে গলা শুকিয়ে ফেলল, ভগবান তার কথা শুনল না। আর যে মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে গরুর মাংস খেল, তার ওপর ভগবানের কৃপা ঝরে ঝরে পড়ছে। বলছি, ঋতব্রতর কথা। আহা ব্যাটা আক্ষরিক অর্থেই ভাগ্যদেবীর বরপুত্র। নইলে এমন কপাল হয়?

আপনারা হয়তো ভাবছেন, আমি ঋতব্রতকে ব্যঙ্গ করছি। বিপদের দিনে তাকে খোঁটা দিচ্ছি। না দিচ্ছি না। কারণ আমি জানি, ঋতব্রতর এই বিপদ আসলে বিপদ নয়। এটা একটা সুবর্ণসুযোগ। এমন সুযোগ, এমন ভাগ্য খুব কম লোকের কপালে জোটে।

তবে হ্যাঁ, মানুষ তো বেসিক্যালি মূর্খ, তাই ভগবান যখন কৃপা করেন তখন আমরা সেই কৃপা বুঝতে পারি না। এই যেমন, ঋতব্রতর জীবনে ভগবান এত বড় একটা সুযোগ এনে দিয়েছেন, ঋতব্রত সেটা বুঝতে পারছে না। হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলছে।

ritabrata3

ঋতব্রত, তুই আমার ভাইপোর বয়সী। তাই তুই তুই করেই বলছি, কিছু মনে করিস না। দ্যাখ বাবা, আমি তোর থেকে বেশিদিন এই পৃথিবীতে আছি। লেখাপড়া না হয় তুই বেশি জানিস, কিন্তু বাস্তবজ্ঞান? সেখানে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাই একটু মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোন।

লোকে সহবাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করে। আর তুই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেছিস। না আমরা বলছি না, নম্রতা দত্ত নামে একটি মেয়ে এই অভিযোগ করেছে। তার কথা সত্যি মিথ্যা যাই হোক, একটা কথা পরিষ্কার যে তোকে বিয়ে করতে তার আপত্তি নেই। তাহলে তুই আপত্তি করছিস কেন?

দ্যাখ, উপযুক্ত বউ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। খুব কম লোকই পায়। অনেক জন্মের অনেক পুন্যের ফলে তুই, এমন একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছিস যে তোর সত্যিই তোর উপযুক্ত। একবার ভাব তো, তোর মতো ছেলেকে সামলানো কি যে সে মেয়ের কম্ম। সেই কবে জেরুজালেমের একজন সারাবিশ্বে প্রেম প্রচার করেছিল, তারপরেই তুই। প্রেম করার জন্য তুই সারা বিশ্ব ঘুরছিস। লোকে প্রেম করতে দিঘায় যায়, তুই গেলি নেদারল্যান্ডে। মনে মনে ভাবলি, “আমি কী বড় খেলোয়াড়! যেন ক্রুয়েফ! যেন রুদ গুলিত!” কিন্তু যার সঙ্গে খেলতে গেলি সেও কম বড় খেলোয়াড় নয়। নামে নম্রতা হলেও কাজে জামব্রোতা। জামব্রোতাকে চিনিস তো? নিশ্চয়ই চিনিস। ইতালির ডিফেন্ডার। ট্যাকলে খুব জোর। হ্যাঁ জানি তোকে যে ট্যাকলটা করেছে, তাতে তোর সব্বাঙ্গ টনটন করছে। কিন্তু ভেবে দ্যাখ, যদি তোরা দুজনে জোট বাঁধিস, তাহলে কী দারুণ টিম হবে! যেমন অ্যাটাক, তেমন ডিফেন্স! প্রকাশ-বৃন্দা, বুদ্ধ-মীরা সবাই তোদের ট্যাকলে ছিটকে ছিটকে পড়বে।

আরও একটা ব্যাপার ভেবে দ্যাখ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, স্বামী যদি হয় বলদ বা ভেড়া, স্ত্রী হয় টাট্টু ঘোড়া। স্বামী যদি হয় অফিসের পিওন, স্ত্রী সানি লিওন। স্বামী যদি হয় নজরুল ইসলাম, স্ত্রী রুপম ইসলাম। কিন্তু তোরা? পুরো খাপে খাপে পঞ্চুর বাপ। দাঁড়া একটু বুঝিয়ে বলি। আচ্ছা, আলিমুদ্দিনের যে কমিটি তোকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, তুই তাঁদের সঙ্গে কী করেছিলিস? গোপনে তাঁদের সব কথাবার্তা রেকর্ড করেছিলিস। তারপর শুরু হল ব্ল্যাকমেল। কে কার নামে কী বলেছে, কার পোঁদে কত গু… সব ফাঁস করে দেব।

কিন্তু নম্রতা তোর থেকে তিন কাঠি উপরে। সে গোপনে রেকর্ড করেনি, তোর সামনেই রেকর্ড করেছে। তুই শুধু অডিও রেকর্ড করেছিলিস, এ তো ভিডিও করেছে। শুধু করেছে তাই নয়, বুক বাজিয়ে সেটা প্রকাশ করে দিয়েছে। তুই তো শুধু ফাঁস করব ফাঁস করব বলে হুঙ্কার ছাড়ছিলিস। “এ মেয়ে তো মেয়ে নয়, রঘু ডাকাত নিশ্চয়।“ এখন তুই কোন মুখে বলবি, নম্রতা যা করেছে তা অনৈতিক? তোর জন্য এমন মেয়েই দরকার ছিল রে ঋত। এমন মেয়েই দরকার ছিল।

তুই তো কিছুদিন আগেও বামপন্থী ছিলিস। পূর্ব জার্মানির কথা জানিস তো? সেখানে অলিম্পিকে পদক জয়ী পুরুষ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অলিম্পিকে পদক জয়ী মহিলা খেলোয়াড়দের বিয়ে দেওয়া হত। আশা করা হত, এই বিবাহের ফলে যে বাচ্চাকাচ্চা হবে, তারা অলিম্পিকে পদক জিতবে। আমরাও তেমনি আশা করি রে ঋত। আমরা স্বপ্ন দেখি, তোর আর নম্রতার যে সন্তান হবে, সে গর্ভ থেকেই রেকর্ডিং শুরু করে দেবে। তুই যা যা বলবি, যা যা করবি সব তার রেকর্ডে বন্দী হয়ে থাকবে। তারপর বাইরে বেরিয়েই বলতে শুরু করবে,
A for Apple ঘড়ি
B JP-র হাতটা ধরি
CID ওই তেড়ে এলো
Dutch- দের দেশে হল কেলো
Ethics committee –তে হল নালিশ
Father চাটে তুলোর বালিশ
(শেষ বাক্যটার মানে যিনি বুঝবেন না, তিনি নম্রতার পেশ করা ভিডিও দেখুন।)

মহাভারত নিশ্চয় পড়েছিস। সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাই অভিমন্যু শুধু চক্রব্যূহে ঢোকার রাস্তাটা জানত। বেরিয়ে আসার রাস্তা জানত না। কিন্তু তোর ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না। তুই–‌নম্রতা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লেও সেই না–‌হওয়া শিশুর ঠিক রেকর্ডিং করে রাখবে। সময়মতো শুনে নেবে। সে চক্রব্যূহে ঢুকলেও বেরোনোর রাস্তা ঠিক খুঁজে নেবে।

দেরি করিস না ঋতব্রত, দেরি করিস না। মেয়েটার সঙ্গে মিটমাট করে নে। এতে মামলার হাত থেকে যেমন বাঁচবি, তেমনি জীবনে উন্নতির পথ খুঁজে পাবি। উন্নতির পথ রাজ্যসভাতেই শেষ নয়। যে ফর্মে খেলছিস, তাতে কোপেনহেগেন থেকে কোপাই নদী, নেদারল্যান্ড থেকে নেতারহাট… তোর থুড়ি তোদের জয়ধ্বনিতে মুখর হবে।
মনে রাখিস behind every successful man there is a CAMERAMAN. তোর ক্ষেত্রে না হয় camerawoman-ই হল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.