বিশ্বনাথ বিশ্বাস
যখন মানুষ কাজের মধ্যে থাকে, তখন একটা ছুটিই কত মহার্ঘ হয়ে ওঠে। ইচ্ছে থাকলেও অনেক জায়গায় যাওয়া হয় না। অনেক আমন্ত্রণ রক্ষা করা হয় না। কিন্তু অবসরের পর সম্পূর্ণ অন্য জীবন। তখন অখণ্ড অবসর। অনেক ছুটি। কিন্তু যাওয়ার জায়গা নেই। একসময় যাঁরা আমন্ত্রণ জানাতেন, তাঁরা আর যেতে বলেন না। ভাবেন, কী জানি, এলে হয়তো তিন–চার দিনের আগে যেতে চাইবেন না। আগে যাঁরা নেমন্তন্ন করতেন, তাঁরা এটা জেনেই করতেন যে, যাওয়া হবে না। বা গেলেও পরের দিনই ফিরে আসব। কিন্তু এখন বললে পাছে চলে যাই! একদিন থাকলেই একটা অলিখিত প্রশ্ন শোনা যায়, ‘অতিথি তুম কব যায়ো গে?’
আগে মনে হত, একটা ছুটি পেলে অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখব, নন্দনে সিনেমা দেখব। কিন্তু এখন যখন অনন্ত ছুটি, তখন যাওয়া হয় না। বা গেলেও ততখানি ভাল লাগে না। মনে হয়, একা একা কি আর নাটক দেখা যায়! কিন্তু কাকে সঙ্গে নেবেন! এই সময় বন্ধুও কমে যায়। একসময়ের চেনা বন্ধুরাও নানা অছিলায় এড়িয়ে যায়। পাড়ার চায়ের দোকানে বসলে আগে কত মানুষ কথা বলতেন। এখন গিয়ে বসলে অনেকে উঠে যায়। ভাবে, রিটায়ার করেছে। লোকটার খেয়ে দেয়ে কোনও কাজ নেই। কী জানি, হয়তো জ্ঞান দিতে শুরু করবে।
শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো ঘটনাটা সত্যি। অবসরের পর জীবনটা সত্যিই বড় বদলে যায়। অনেকের চোখের ভাষায় সেটা বুঝতে পারি। আসলে, আমরা কখনই বর্তমান অবস্থানে খুশি নই। যখন চাকরি করি, তখন ছুটি চাই। আবার যখন অনন্ত ছুটি চাই, তখন সেটা বিরক্ত লাগে। এই কারণেই কবি লিখেছিলেন, ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস’।
