মুকুল নন্দী
একশোর বেশি টেস্ট খেললেও তিনি সে অর্থে তারকা নন। তাঁকে বাদ দিলে কোনও হইচই হয় না। তিনি কথা বললে শিরোনাম হয় না। তাঁকে বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় না। তিনি তরুণ ক্রিকেটারদের হার্টথ্রব নন। তাঁকে ঘিরে তরুণীরা উত্তালও হয় না। তাই তিনি অবসর নিলেও তেমন হইচই হবে না, জানাই ছিল। টিভি চ্যানেলে রাজনীতির এত চাপানোতরে তাঁর জায়গা হওয়ার কথা নয়। কাগজেও একদিন বা বড়জোর দুদিন খেলার পাতায় একটু জায়গা বরাদ্দ। তারপর যে কে সেই।
বর্ণময় চরিত্র ঠিক কারা? মাঝে মাঝে গুলিয়ে যায়। যাঁরা নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, যাঁরা নিজের কাজের থেকেও বেশি অন্য কারণে শিরোনামে আসেন, তাঁরাই নাকি বর্ণময়। নারী–সুরা অনুষঙ্গ যোগ গলে সেই বর্ণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সেদিক থেকে চেতেশ্বর পুজারা কোনওভাবেই বর্ণময় নন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এক সিরিজে তিনটে সেঞ্চুরি করে সিরিজ জেতান। কিন্তু আইপিএলের দুনিয়ায় ‘আনসোল্ড’ থেকে যান। তথাকথিত তারকারা যখন রনজি ট্রফি বা ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে ঘুরেও তাকান না, তিনি তখন সৌরাষ্ট্রের মতো অখ্যাত রনজি দলকে চ্যাম্পিয়ন করার দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নেন। রাহুল দ্রাবিড়ের পর তিন নম্বরে সবচেয়ে বড় ভরসার ঠিকানা। যিনি ধৈর্য ধরে উইকেটে পড়ে থেকে বিপক্ষের আক্রমণকে ক্লান্ত ও দিশেহারা করে দিয়েছেন বছরের পর বছর, শেষ দু’বছরে জাতীয় দলে তাঁরই কিনা জায়গা হয়নি। অথচ, গত দু’বছরে টেস্টে ভারত যে দারুণ ফল করেছে, এমনও নয়। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্টেই হারতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ১–৩ এ শোচনীয় পরাজয়। ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা আচমকাই সরে দাঁড়ালেন। তারপরও ইংল্যান্ড সফরের জন্য তাঁর নাম নির্বাচকদের মনে পড়ল না। তিন নম্বরে কারা খেললেন? তাঁদের কী পারফরম্যান্স, সবাই দেখলেন। করুণ নায়ার বা সাই সুদর্শন কখনই চেতেশ্বর পুজারার বিকল্প নন। এটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।
পুজারা আর হয়তো বেশিদিন খেলতেন না। ৩৭ বছর হয়ে গেছে। এমনিতেই সরে যেতেন। কিন্তু বিদায়বেলায় তাঁকে কি একটু বাড়তি মর্যাদা দেওয়া যেত না! যে মানুষটা ভারতীয় ক্রিকেটকে নীরবে এতকিছু দিয়ে গেলেন, তাঁর কি একটা ফেয়ারওয়েল টেস্ট প্রাপ্য ছিল না! দু’বছর জাতীয় দলের বাইরে থেকে, একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে কেন সরে দাঁড়াতে হল? পুজারার থেকে বড় তারকা হয়তো অনেকেই আসবেন। কিন্তু টেস্টের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এমন ‘নীরব সাধক’ আর পাওয়া যাবে?
