ভূতের রাজা তিনটি বর দিতে চেয়েছিল। গুপী–বাঘা কী চেয়েছিল? ১) যেথা খুশি যাইতে পারি, ২) যা খুশি খাইতে পারি, ৩) মনের সুখে গাইতে পারি। অর্থাৎ, তারা একটু ঘুরতে চেয়েছে, ভাল–মন্দ খেতে চেয়েছে, আর গলা ছেড়ে গান গাইতে চেয়েছে। বাঙালির তিন শাশ্বত চাহিদাই যেন ফুটে উঠেছে।
প্রথমেই তারা চেয়েছে, যেথা খুশি যাইতে পারি। অর্থাৎ, বাঙালি ভ্রমণবিলাসী। সে এখানে–সেখানে বেরিয়ে পড়তে চায়। এটা নিছক কল্পকাহিনির কথা নয়। পুজোয় ট্রেনের বুকিংয়ে দিকে তাকালেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আগে নিয়ম ছিল, চার মাস আগে থেকে ট্রেনের টিকিট কাটা যেত। এবার কমিয়ে দু’মাস করা হয়েছে। অর্থাৎ, ষাট দিন আগে টিকিট বুক করা যাবে। আমরা কী দেখলাম, পুজোর আগে দূরপাল্লার কোনও ট্রেনেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ, বাঙালি সেই সময় বেরিয়ে পড়তে চায়।
দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেনে টিকিট নেই। কাশ্মীর বা রাজস্থান যাবেন, তাও টিকিট নেই। উত্তর ভারত গেলেও ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। এমনকী পড়শি রাজ্য পুরী যাবেন, সেখানে সব টিকিট বুক। আর উত্তরবঙ্গ হলে তো কথাই নেই। হাওড়া ও শিয়ালদা থেকে রোজ এত এত ট্রেন ছাড়ছে। কোথাও জায়গা নেই। এমনকী ওয়েটিং লিস্টের টিকিটও নেই। মহালয়ার পর থেকেই এই ভিড়। পুজোর সময় এত এত মানুষ ঘুরতে যান? পুজোর আগে যদি বাংলায় আসার ট্রেনে ভিড় হত, তাহলে না হয় বোঝা যেত যে, প্রবাসীরা বাড়ি ফিরতে চাইছেন। কিন্তু পুজোর সময় কলকাতা থেকে দূরদূরান্তে যাওয়ার ভিড়। অর্থাৎ এই ভিড় ভ্রমণ পিপাসুদের। আর কোনও জাতির মধ্যে বেড়ানোর এমন তাগিদ আছে বলে মনে হয় না।
শুধু যে ট্রেনে এমন ভিড়, তা নয়। নিশ্চিতভাবেই হোটেলের ভাড়াও হবে লাগামছাড়া। ট্রেনে টিকিট না পেয়ে অনেকে বাসের টিকিট কাটতে চাইবেন। সেখানে আবার নির্দিষ্ট ভাড়ার ব্যাপার নেই। ঝোপ বুঝে কোপ মারা। অর্থাৎ, চারগুন/পাঁচগুন ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। তাহলে উপায়? কেন্দ্র, রাজ্য দুই সরকারেরই কিছুটা ভূমিকা আছে। ১) আরও বেশি করে স্পেশ্যাল ট্রেনের বন্দোবস্ত করা ২) বাসের ভাড়া, হোটেল ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা। বাঙালির জীবনে সমস্যার অন্ত নেই। ঘরকুনো অপবাদ ঘুচিয়ে সে যদি একটু নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারে, মন্দ কী?
