তিন মাসে বিদায় নিলেন তিন স্তম্ভ। শুরু হয়েছিল রোহিত শর্মাকে দিয়ে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিরাট কোহলি। এবার সাম্প্রতিকতম সংযোজন চেতেশ্বর পুজারা।
তিনজনেরই বয়স হয়েছিল। অবসর নেওয়ার সময়ও হয়ে এসেছিল। তবু তাঁদের অবসর যেন কিছুটা আচমকাই। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ইংল্যান্ড সফরে যাবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। রোহিত ছিলেন দলের অধিনায়ক। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আচমকাই দিলেন বিদায়বার্তা। বিরাট কোহলির বিদায় তো আরও বেশি আকস্মিক। তাঁর যা ফিটনেস ও ফর্ম, তাতে টেস্ট ঘরানায় আরও এক–দু’বছর খেলতেই পারতেন। যদি অবসর নেওয়ারই হয়, অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরেও নিতে পারতেন। আইপিএল চলছে, এমন অবস্থায় কেন ঘোষণা করতে গেলেন? এই দুই মহাতারকার বিদায়ে কোনও অভিমান ও দীর্ঘশ্বাস কাজ করছে না তো!
এবার পুজারা। দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন দু বছর আগে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোত থেকে কিছুটা যেন দূরেই ছিলেন। কিন্তু ফিরে আসার মরিয়া একটা চেষ্টাও ছিল। সৌরাষ্ট্রের হয়ে রনজিতে প্রতিটি ম্যাচ খেলেছেন। গত কয়েক বছর ধরে কাউন্টি ক্রিকেটেও নিয়মিত খেলে গেছেন। হয়তো বয়সের কারণেই তাঁকে ব্রাত্য রাখা হয়েছিল। সূত্রের দাবি, তিনি চেয়েছিলেন একটু সম্মানজনক বিদায়। নিদেনপক্ষে তাঁকে একটি টেস্টে খেলানো হোক। যেন সেই টেস্ট থেকে বিদায় নিতে পারেন। কিন্তু শতাধিক টেস্ট খেলা পুজারার জন্য এই সম্মানটুকুও দেখাতে রাজি হয়নি ভারতীয় বোর্ড। সামনেই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ। একটি টেস্টে কি পুজারাকে সুযোগ দেওয়া যেত না?
সাম্প্রতিককালে অনেক ক্রিকেটারকেই এভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেই সরে যেতে হয়েছে। যেমন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ঝুলিতে পাঁচশোর ওপর টেস্ট উইকেট। পাঁচটি টেস্ট শতরান। অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে মাঝপথে আচমকাই অবসর নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। নিশ্চয় এমন কিছু ঘটেছিল, যা এখনও সামনে আসেনি। রোহিত–বিরাটেরও তো এভাবে হঠাৎ করে অবসর ঘোষণার কথা ছিল না। তাঁদের বিদায়টাও সম্মানজনক হতে পারত। আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি হতে পারত। উপযুক্ত সম্মান দিয়ে, ফেয়ারওয়েল টেস্টের মাধ্যমে তাঁদের বিদায় জানানো যেতে পারত। পুজারার ক্ষেত্রেও বিষয়টিকে সম্মানজনকভাবে মীমাংসা করা যেত। কিন্তু সিনিয়রদের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোথাও একটা বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে। ক্রিকেটার আর বোর্ডের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে পারতেন নির্বাচকরা। কিন্তু তাঁরাও যেন দিশাহীন। কী করা উচিত, তাঁরাও যেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
একজন খেলোয়াড় খেলার মাঠ থেকেই বিদায় বার্তা দিতে চান। এটাই তাঁর কাছে পরম তৃপ্তির। কিন্তু খেলোয়াড়দের এই মনস্তত্ত বোঝার ক্ষেত্রে বোর্ড যেন হাজার মাইল পিছিয়ে। তাই কাউকে এক্স হ্যান্ডলে, কাউকে ইনস্টাগ্রামে অবসর ঘোষণা করতে হচ্ছে। দেশের হয়ে এতবছর ঘাম ঝরানোর পরেও একবুক অভিমান ও যন্ত্রণা নিয়ে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। এমন বিবর্ণ বিদায় সত্যিই তাঁদের প্রাপ্য ছিল না। বোর্ড নতুন করে আত্মসমীক্ষা করুক।
