অবোধের গোবধেই আনন্দ, তেমনই অরূপের ক্রীড়ামন্ত্রী পরিচয়েই আনন্দ

অজয় নন্দী

আচ্ছা, অরূপ বিশ্বাস কোন দপ্তরের মন্ত্রী?‌ একটা সমীক্ষা হয়ে যাক। যাঁরা তাঁকে চেনেন না, তাঁদের কথা বাদ দিচ্ছি। যাঁরা চেনেন, তাঁদের মধ্যেই সমীক্ষা হোক। শতকরা নব্বই ভাগ লোক উত্তর দেবেন ক্রীড়ামন্ত্রী।

উত্তরটা ভুল নয়। তবে অসম্পূর্ণ। তাঁর হাতে ক্রীড়ার থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দুটো দপ্তর আছে। অথচ, সেই পরিচয়ে তাঁকে কজন চেনেন?‌ অরূপ বিশ্বাস রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী। নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। অরূপ বিশ্বাস রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী। নিঃসন্দেহে এটাও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। কিন্তু মনে করে দেখুন তো, বিদ্যুৎ মন্ত্রী বা আবাসন মন্ত্রী হিসেবে কাগজে কদিন তাঁর ছবি দেখেছেন?‌ তিনি যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদেরই জিজ্ঞেস করে দেখুন। তাঁরাও বিদ্যুৎ বা আবাসনের কথা বলবেন না। তাঁরাও ঘুরেফিরে সেই ক্রীড়া দপ্তরের কথাই বলবেন। আগের টার্মে তিনি ছিলেন পূর্তমন্ত্রী। এই তথ্যটা কজন জানেন, তা নিয়েও একটা সমীক্ষা হতে পারে।

তাহলেই ভেবে দেখুন, একজন পূর্তমন্ত্রী বা বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে লোকে চিনছে ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে। এমন নয় যে তিনি দারুণ ক্রীড়াপ্রেমী। আসলে, ওই দপ্তরগুলোয় তাঁর কার্যত কোনও ভূমিকাই নেই। তাঁর যেটুকু ভেসে থাকা, এই ক্রীড়া দপ্তরের সুবাদেই। কোথায় বিদ্যুৎ বা আবাসন দপ্তরের বাজেট আর কোথায় ক্রীড়া দপ্তরের বাজেট। কিন্তু কী আর করা যাবে!‌ তিনি এখনও কাউন্সিলরের বাইরে নিজেকে ভাবতেই পারেন না। অবোধের গোবধেই আনন্দ, তাঁর নিজেকে ক্রীড়ামন্ত্রী ভেবেই আনন্দ। এইসব লোককে মন্ত্রী করলে যা হয়, তাই হচ্ছে। কখনও খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, আর কখনও ফিল্মস্টারদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। এছাড়া আর কাজ নেই। একজন মন্ত্রী নিজেকে কতটা হাস্যকর করে তুলতে পারেন, তাঁকে দেখেই বোঝা যায়।

যখনই দেখেন বেশ কয়েকদিন কাগজে নাম বা ছবি বেরোচ্ছে না, তখনই একটা প্রেস কনফারেন্স ডেকে দেন। আর আবোল তাবোল বকতে থাকেন। মন্ত্রী হিসেবে কোনটা বলতে হয়, আর কোনটা বলতে নেই, এই ন্যূনতম জ্ঞানগম্যিও নেই। হঠাৎ, মাস খানেক আগে এক মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করে বসেছিলেন, পরেরবারও সঞ্জয় সেনই বাংলার কোচ থাকছেন। আইএফএ কোনও সিদ্ধান্তই নিল না। এদিকে, তিনি ঘোষণা করে বসলেন।

এবার তিনি বলে বসলেন, জাতীয় দলে বাঙালি নেই কেন, তার প্রতিবাদ করতে হবে। জাতীয় দলের কথা ছেড়ে দিন। আইএসএলে কলকাতার দুই প্রধানে কজন বাঙালি ফুটবলার আছেন?‌ দুই ক্লাবের যে কোনও অনুষ্ঠানে তিনি পৌঁছে যান। দন্ত বিগলিত করে ছবি তোলেন। দুই ক্লাবের কর্তাদের তো বলতে পারেন বাঙালি ফুটবলার নেই কেন?‌ আগে তাঁদের বলুন, বাঙালি খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিলে আপনাদের ক্লাবে যাব না। কলকাতার ক্লাবে আগে বাঙালিদের খেলার ব্যবস্থা করুন, জাতীয় দলের কথা পরে ভাববেন।

একদিন হঠাৎ করে বলে বসলেন, আইএফএ–‌তে কোটা সিস্টেম চলছে। তাই ফুটবলে বাংলা সাফল্য পাচ্ছে না। ভাবলেন বিরাট এক বোমা ফাটিয়ে দিলেন। কোটা সিস্টেম আছে, এটা তো ঘটনা। কিন্তু সেই কোটায় কারা আছেন?‌ মুখ্যমন্ত্রীর দাদার ইচ্ছে হল, তিনি আইএফএ–‌র সভাপতি হবেন। একেবারেই আইএফএ–‌র সংবিধান বদলে তাঁকে প্রেসিডেন্ট করা হল। কার কোটায়?‌ ক্রীড়ামন্ত্রীর ভাই আইএফএ–‌র ভাইস প্রেসিডেন্ট। কার কোটায়?‌ সমস্ত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁর ক্লাবকে কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে আনা হয়েছে। নিজের ভাইকে আইএফএ–‌র পদাধিকারি বানিয়ে তিনিই কিনা বলছেন কোটা সিস্টেমের কথা।

এবার তাঁর আক্ষেপ, জেলা থেকে ফুটবলার উঠে আসছে না। তাই রাজ্য সরকার বিবেকানন্দ কাপ চালু করবে। আচ্ছা, জেলায় জেলায় ডিএসএ গুলো কাদের নিয়ন্ত্রণে আছে?‌ যাঁদের খেলাধূলার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁদের ডিএসএ–‌র মাথায়, ক্লাবের মাথায় বসানো হয়েছে। ফল যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। এই সমস্ত ক্লাবকে যে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়, কটা ক্লাব খেলাধূলার উন্নয়নে সেই টাকা খরচ করে?‌ ক্রীড়া দপ্তরের পক্ষ থেকে কোথাও কোনও অডিট হয়?‌ অন্তত নব্বই শতাংশ অর্থের অপচয় হয়। একবার বলে দেখুন তো।

এবার তিনি ব্যস্ত ডায়মন্ড হারবারকে তোল্লাই দিতে। কখনও বলছেন, ডায়মন্ড হারবারকে দেখে সবার শেখা উচিত। কখনও দুই প্রধানের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারকেও জুড়ে দিচ্ছেন। কখনও ডায়মন্ডের হয়ে গলা ফাটাতে মাঠ ভরানোর ডাক দিচ্ছেন। তিনি ভুলেই যাচ্ছেন যে তিনি রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী। তাঁর এতখানি তাঁবেদারি হয়তো ডায়মন্ড কর্তারাও চাইছেন না। কিন্তু তাঁকে তাঁবেদারি করে যেতে হবে। যদি বিধানসভার টিকিট ঘ্যাচাং ফু হয়ে যায়!‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *