রক্তিম মিত্র
কে প্রধানমন্ত্রী, মাঝে মাঝে সেটা বড্ড গুলিয়ে যায়। এবারের সংসদ অধিবেশনেও গুলিয়ে গেল। প্যাহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা হামলা চালাল। ২৬ জন ভারতীয় নিহত হলেন। এরপরেও ঘুরেফিরে সেই ‘জওহরলাল নেহরু’। মনে হচ্ছিল, নেহরুই যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নেহরুই যেন প্রধানমন্ত্রী।
এগারো বছর হয়ে গেল একটা সরকার চলছে। এখনও ন্যূনতম দায়টুকুও নিতে শিখল না! এখনও সবকিছুর মূলে সেই নেহরুর নাম টেনে আনা! মনে হল, ট্রাম্প যেন নেহরুকে দাবড়ানি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ধমক শুনে নেহরুই যেন ভয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন।
লোকসভায় বিরোধীরা নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সরকার তার সাধ্যমতো ব্যাখ্যা দেবে। কোথাও ত্রুটি স্বীকার করবে। কখনও বিভ্রান্তি দূর করবে। কোথাও সবাইকে সঙ্গে থাকার আহ্বান জানাবে। কোথাও জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেবে। এটাই হওয়ার কথা। তার বদলে টেনে আনা হল বাষট্টির কথা, দেশভাগের কথা, আরও একের পর এক অবান্তর সব প্রসঙ্গ। শাসকদলের একদল সাংসদ সমানে চিৎকার করে গেলেন ‘হিন্দু’ ‘হিন্দু’। এত স্পর্শকাতর একটা আলোচনা, তার মাঝেও হিন্দু–মুসলিম করে গেলেন! এইসব অর্বাচীনরা লোকসভার সদস্য! ভাবতে গেলে নিজের দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে করুণাই করতে হয়।
এটা ঘটনা, বিরোধীদের কথাতেও নতুনত্ব কিছু ছিল না। গত কয়েক মাস ধরে যেসব কথা সব জায়গায় ঘোরাফেরা করেছে, সেগুলোই উঠে এল। সবার ভাষণই যেন এক ছাঁচে ঢালা। সেই সোশ্যাল মিডিয়া দেখেই যেন প্রস্তুতি নিয়েছেন। দেশের মানুষ জানেন না, এমন কোনও মৌলিক প্রশ্ন উঠে এল না। কিন্তু সরকারপক্ষ যেন আরও অসহায়। তাঁরা যেন ব্যস্ত রইলেন বিরোধীদের আক্রমণে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণও সস্তা নাটুকেপনা ছাড়া কিচ্ছু নয়। একজন প্রধানমন্ত্রী এমন লঘু কথা কী করে যে বলেন! এরপরেও বিরোধীদের প্রতি আক্রমণের রুচি হয়! কী অবলীলায় বললেন, কোনও রাষ্ট্রপ্রধান নাকি সিজ ফায়ারের কথা বলেননি। তাহলে ট্রাম্প যে ২৯ বার প্রকাশ্যে দাবি করলেন! হীম্মৎ থাকলে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলতে পারতেন, ট্রাম্প আগাগোড়া মিথ্যা বলছেন। হতে পারে, ট্রাম্প সরাসরি তাঁকে বলেননি। অফিসার মারফত নির্দেশ দিয়েছিলেন (আর কথা হলেই বা কী ভাষায় হত!)। সে তো আরও ভয়ঙ্কর। ট্রাম্প নিজে কথা বলার যোগ্যও মনে করছেন না। অফিসার মারফত যা নির্দেশ দেওয়ার দিয়ে দিচ্ছেন।
কোনও সুস্থ ও শান্তিকামী মানুষ যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ চায় একশ্রেণির উন্মাদরাই। সেটাই বুমেরাং হয়েছে শাসকের। এ যেন বাঘের পিঠে চড়া। নামলেই বিপদ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করব— এই মর্মে এতবার হুঙ্কার ছাড়া হয়েছে, এখন পিছিয়ে গেলে প্রশ্ন তো উঠবেই। এতদিন আগের প্রধানমন্ত্রীদের অকাতরে ‘কাপুরুষ’ বলে এসেছেন। এখন সেই ‘তকমা’ নিজের দিকে ধেয়ে আসবেই। এতদিন অন্যদের বলে গেছেন আমেরিকার কথায় ওঠা–বসা করে। এবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যেই বারবার বলে চলেছেন, তাঁর ধমকে সিজ ফায়ার বন্ধ হয়েছে। এখন সরকারের চুপ থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই। ইতিহাস এভাবেই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
