প্রশান্ত বসু
কে কত রান করলেন, সেটা স্কোরবোর্ডে লেখা থাকে। সেই স্কোরবোর্ড দেখে ভবিষ্যতে হয়তো কেউ বিচার করতে বসবেন, কোন টেস্টে কার কী অবদান ছিল। এভাবেই কয়েক বছর পর যদি কেউ ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের বিশ্লেষণ করতে বসেন, তিনি দেখবেন, প্রথম ইনিংসে ভারতের কেউই শতরান করেননি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের তিনজন শতরান করেছিলেন। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল।
আচ্ছা, এতে কিছু বোঝা যাচ্ছে? এই ম্যাচের নায়ক কে? দুরন্ত বোলিং ও শতরানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বেন স্টোকসকে। কিন্তু আমার মতে, এই ম্যাচের নায়ক ঋষভ পন্থ। স্কোরবোর্ডে দেখাচ্ছে, তিনি মাত্র ৫৪ রান করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটই করেননি। এমনকী উইকেট কিপিংও করেননি। আসলে, ঋষভ যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম দিন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হল। যেমন তেমন চোট নয়, একেবারে পা ভেঙে যাওয়া বলতে যা বোঝায়, তাই। পরের দিন সেই ভাঙা পা নিয়েই ব্যাট করতে এলেন। ওই অবস্থায় মানুষ উঠে দাঁড়ানোর কথাই ভাবতে পারে না। সেখানে ঋষভ কিনা ইংল্যান্ডের ওই বোলিং আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়ালেন! ক্রিকেটে অনেক সাহসিকতার কাহিনি শুনেছি। এটা বোধ হয় অতীতের অনেক ঘটনাকে ছাপিয়ে যাবে। দল বিপর্যয়ের মুখে, এই অবস্থায় যাঁর হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা, তিনি মাঠে নেমে এসে ব্যাট করলেন! এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
অনেকেই বলেন, এই প্রজন্মের কোনও দায়বদ্ধতা নেই, এই প্রজন্ম নাকি দেশের কথা ভাবে না। ঋষভের ইনিংস যেন মোক্ষম একটা জবাব। তিনি আইপিএলে হায়েস্ট পেইড ক্রিকেটার। কিন্তু যেখান দেশের হয়ে নিজেকে এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে, সেখানেও সবার আগে তিনি। ইংরেজ বোলাররা ক্রমাগত আহত পা লক্ষ্য করেই বোলিং করে যাচ্ছেন। কিন্তু ঋষভ যেন অকুতোভয়। ওই পা নিয়েই চার মারছেন, ছয় মারছেন। দলকে বিপদসীমা থেকে টেনে আনলেন অনেকটাই নিরাপদ জায়গায়।
সত্যিই এমন একটা ইনিংস মহাকালের মহাফেজখানায় জায়গা পাওয়ার মতোই। গাভাসকার, শচীনরা আগেই বিদায় নিয়েছেন। বিরাট কোহলিও আর টেস্টে খেলবেন না। আমরা গর্ব করে বলতে পারব, আমাদের একটা ঋষভ পন্থ ছিল। এমন ইনিংস যে কোনও শতরানকেও ম্লান করে দিতে পারে।
