সরল বিশ্বাস
বেশ কয়েকদিন টিভি চ্যানেলগুলি মেতেছিল একুশে জুলাই নিয়ে। কত মানুষ আসছেন, তাঁরা কোথায় আছেন, মেনুতে কী আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন আগে থেকে অ্যাঙ্গেলটা বদলে গেল। নেতৃত্ব কী বার্তা দিতে চাইছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
ব্যস, একুশে জুলাই শেষ হল। দুদিন পরই মনে পড়ে গেল, আজ তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির তিন বছর পূর্তি। দেখতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে গেল! সত্যিই, সময় কত দ্রুত পেরিয়ে যায়। সেই দু দফায় একশো কোটির ওপর টাকা, সেই নামে–বেনামে কত কত সম্পত্তি, সব আমরা কেমন বেমালুম ভুলে গেলাম! ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক চাকরিহারা। যোগ্য শিক্ষকরা দিনের পর দিন রাজপথে ধর্না দিচ্ছেন। আমাদের মনে কোনও হেলদোলই নেই।
২৩ জুলাই শুধুই কি পার্থর গ্রেপ্তারির তিন বছর? আসলে, একটু অন্যভাবেও দেখা যায়। এই দিনটা বোধ হয় ইডি আর সিবিআই এর সীমাহীন ব্যর্থতারও তিন বছর পূর্তি। তিন বছর হয়ে গেল এই কীর্তিমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রথম তিন চার দিনে কত কথাই না বেরিয়ে এল। কত সম্পত্তি, কত বান্ধবী, সব ঠিকুজি কুষ্ঠি–সহ বেরিয়ে এল।
কিন্তু আসল যেটা বেরিয়ে আসার কথা, সেটা এই তিন বছরেও সিবিআই বা ইডি জানতে পারল না। কোর্টের ধাঁতানি খেয়ে কখনও কুন্তল, কখনও শান্তনু— এমন কিছু খুচখাচ এজেন্টের নাম সামনে এল। কোনও এক কাকুর সন্ধান পাওয়া গেল। তাঁর ভয়েস টেস্ট নিয়ে কত টালবাহানা হল। এক বছর ধরে সেই ভয়েস রিপোর্টই পাওয়া গেল না। সেই কাকু কবে জামিন পেয়ে গেছেন। একে একে মাতব্বররা জামিন পেয়ে বড় বড় ভাষণ দিতে শুরুও করে দিয়েছেন। কিন্তু ইডি এখনও আসল মাথার হদিশ পেল না!
একটা বাচ্চা ছেলেও জানে, পার্থ চ্যাটার্জি নিজেও নেহাতই এক চুনোপুঁটি। তাঁর কার্যত কোনও ক্ষমতাই ছিল না। তাঁর ‘হুজুর’ ছিলেন অন্য কেউ। সেই হুজুর কে, সেটা বুঝতে কোনও গোয়েন্দা হওয়ার দরকার পড়ে না। একটু সাধারণ বোধ বুদ্ধি থাকলেই চলে। যে সিবিআই তিনদিনের মধ্যে এতকিছু বের করে ফেলল, সেই সিবিআই তিন বছরে মাথার সন্ধান পেল না, এটা বিশ্বাসযোগ্য! প্রশ্ন উঠছে আদালতের ভূমিকা নিয়েও। কোর্টের তদারকিকে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। কোর্ট কী তদারকি করছে? তদন্তের নামে যে অষ্টরম্ভা হচ্ছে, এই সহজ সত্যিটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না? সিবিআই জানে, আদালত বড়জোর দু–একবার মৃদু ধমক দেবে। এর বেশি কিছুই করতে পারবে না।
আমি নির্দোষ, আমার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ নেই— তিন বছর পরেও পার্থ চ্যাটার্জির মতো লোকেরা মিডিয়ার সামনে এমন বলার সাহস পান কী করে? পারেন, কারণ, সিবিআই আর ইডি নামে দুটো চূড়ান্ত অপদার্থ এজেন্সি আছে। যাঁরা সব প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও কোর্টে পেশ করতে পারে না। যেটা তিন দিনে হয়ে যায়, সেটা তিন বছরেও করে উঠতে পারে না। একে একে সবাই জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, পার্থ চ্যাটার্জিও যে কোনও দিন পেয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আসলে দোষটা সিবিআই–এর নয়। তাঁরা চাইলে, তিন দিনেই এই রহস্য ভেদ করতে পারেন। কিন্তু কে বা কারা বারবার তদন্তের গতিকে শ্লথ করে দিচ্ছেন! সেই নাটের গুরু কারা?
না, ২৩ জুলাই পার্থর গ্রেপ্তারির তিন বছর পূর্তি নয়। ২৩ জুলাই আসলে যাঁরা সিবিআই চালান, সেই বীরপুঙ্গবদের অপদার্থতার তিন বছর পূর্তি। তাই এই তিন বছর পূর্তির দিনে পার্থ বা অর্পিতাকে নিয়ে খিল্লি নয়। যদি গালাগাল দিতে হয়, ইডি কর্তাদের দিন। যদি ঘৃণা করতে হয়, দিল্লিতে বসে থাকা ওই নাটের গুরুদের করুন।
