কুণাল কামরাকে নয়, ওই শিবসৈনিকরা যেন থাপ্পড় মারলেন শিন্ডেকেই

রক্তিম মিত্র

কুণাল কামরা। নামটা প্রথম শুনি বেশ কয়েক বছর আগে। যখন তিনি বিমানে অর্ণব গোস্বামীকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। কুণাল একজন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। অনেককেই মিমিক্রি করেন। কিন্তু তাঁর এই আচরণ সমর্থনযোগ্য ছিল না। তিনি নিজের স্টুডিওতে অর্ণবকে নিয়ে আলাদা করে গান বাঁধতেই পারতেন। কিন্তু বিমানের মাঝে যা করেছেন, তা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু অর্ণব গোস্বামী আবার চিৎকার করতে সিদ্ধহস্ত। অন্যের কথা শোনার ধৈর্য তাঁর নেই। তিনি মনে করেন, তিনি একাই চিৎকার করে যাবেন। সেটাই বাকিদের শুনে যেতে হবে। এ হেন অর্ণব যে চুপচাপ থাকার পাত্র নন, তা বোঝাই গিয়েছিল। ফল কী হল!‌ একের পর বিমান সংস্থা কুণালের বিমান ভ্রমণেই নিষেধাজ্ঞা জারি করল। যে বিমানে তিনি এমন আচরণ করেছিলেন, তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু অন্যান্য সংস্থাগুলিও যেভাবে উপযাচক হয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি শুরু করলেন, তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়।

যাই হোক, আবার শিরোনামে সেই কুণাল। তিনি মাস দুই আগে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে একনাথ শিন্ডে নিয়ে কিছু কটাক্ষ ছিল। যদিও সরাসরি নাম করেননি, কিন্তু যাঁরা বোঝার, বুঝতে পারবেন, লক্ষ্য কে। মোদিকে নিয়েও তাঁর প্যারোডি ছিল। প্যারোডির পাল্টা প্যারোডি হতেই পারত। তাছাড়া, শাসক হতে গেলে কিছু সহিষ্ণুতা থাকাটাও জরুরি। কুণাল এমন কিছুই শব্দ ব্যবহার করেননি, যা শালীনতার সীমার বাইরে। রাজনৈতিক মঞ্চে এমনটা তো আখছার হয়ে থাকে। টিভি চ্যানেলের বিতর্কেও এর থেকে অনেক নিম্নমানের ভাষায় তর্কাতর্কি চলে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দেন, তা অনেক সময়ই এর থেকে নিম্নমানের। এখানে তবু হাস্যরস আছে, বুদ্ধিমত্তা আছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সেটুকুও থাকে না।

ফল কী হল!‌ একদল ভাঙচুর চালালেন স্টুডিওতে। দু মাস আগে যে স্টুডিওতে রেকর্ডিং হয়েছিল, সেই স্টুডিওতে বীরদর্পে ভাঙচুর চালাল একদল জনতা। স্বয়ং একনাথ শিন্ডে কী বললেন?‌ তিনি আউড়ে বসলেন নিউটনের তৃতীয় সূত্র। অর্থাৎ, ক্রিয়া হলে প্রতিক্রিয়াও হবে। কোনটা ক্রিয়া আর কোনটা প্রতিক্রিয়া?‌ কমেডিটা ক্রিয়া আর ভাঙচুরটা হল প্রতিক্রিয়া?‌ এই মানুষটি কয়েকমাস আগেও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন?‌ এই মানুষটি এখনও উপ মুখ্যমন্ত্রী?‌

তিনি দল বদল করতেই পারেন। যে দল তাঁকে পরিচিতি দিল, তাকে ছেড়ে আসতেই পারেন। কিন্তু বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করার নৈতিকতাটুকুও দেখাননি। কোনও নৈতিকতা বা আদর্শের টানে নয়, স্রেফ ক্ষমতার জন্যই শিবির বদল করেছিলেন। এই লোককে ‘‌গদ্দার’‌ বললে খুব কি অন্যায় হয়ে যায়!‌ ভাঙচুরের অধিকার জন্মে যায়!‌

আসলে, শিন্ডের মতো লোকেরা দল ভাঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বা উপ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান ঠিকই, কিন্তু এই চেয়ারের ওজন বোঝেন না। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার তাঁকে আর সেই পদ দিল না বিজেপি। করা হল উপ মুখ্যমন্ত্রী। ন্যূনতম আত্মসম্মান থাকলে এই পদটা নিতেন না। অন্তত বালাসাহেব ঠাকরে কোনও দিন মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে চাননি। যাই হোক, একনাথ শিন্ডের অনুগামীরা হোটেলে ঢুকে এভাবে ভাঙচুর চালানোর সাহস পেলেন কোত্থেকে?‌ আসলে, তাঁরা জানেন, পুলিশ কিছুই করবে না। থাপ্পড়টা তাহলে কার গালে পড়ল?‌ পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি এমন অনাস্থা তো তাঁরাই জানালেন।

সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানেন, কেন্দ্রের দিক থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। মোদিকে ব্যঙ্গ করেছেন, অতএব ভাঙচুর বৈধ, এই আনন্দে কেন্দ্রীয় সরকারও হাত গুটিয়েই থাকবে। অর্থাৎ, কেন্দ্রের সরকার যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁরাও এই গুন্ডামি আটকাতে কিছুই করবে না। উল্টে তাঁদের আড়াল করবে। পুরস্কৃত করবে। আর কুণাল কামরাকে নানাভাবে হেনস্থা করবে। সত্যিই, প্রধানমন্ত্রীর অপদার্থতার ওপর তাঁর দলের লোকের কতখানি আস্থা!‌

Share