হরিশ মুখার্জি
বাংলাদেশে কী হচ্ছে, দেখছেন তো?
গত কয়েক মাসে এরকম প্রশ্ন যে কতবার শুনতে হয়েছে! প্রশ্ন করছেন ঠিকই, উত্তরটাও তিনি জানেন। মানে, তিনি যে উত্তরটা জানেন, সেই উত্তরটাই শুনতে চাইছেন।
কিছুটা না জানার ভান করে পাল্টা প্রশ্ন করি, কী হচ্ছে বলুন তো!
উত্তর আসে, সে কী আপনি জানেন না, হিন্দুদের ওপর এত অত্যাচার হচ্ছে। হিন্দুরা তো ও দেশে আর থাকতেই পারবে না।
বোঝা গেল হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির কামাল। কত মগজে যে এমন প্রশ্ন ঢুকে আছে, তার কোনও মগজ সুমারি হলে বোঝা যেত।
এসব ক্ষেত্রে ঝগড়া করে লাভ নেই। বরং না জানার ভান করাই ভাল। মজা করেই বলি, বাংলাদেশের সবাইকে তো চিনি না। ক্রিকেট ভালবাসি। তাই সাকিব আল হাসানকে চিনি। বেশ কয়েকমাস ধরে বেচারা বউ বাচ্চা নিয়ে দেশ ছাড়া। নিজের দেশে জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছিল। দেশে ফিরতেই পারল না।
উল্টোদিক থেকে ভেসে এল, এটা তো খেলার ব্যাপার। খেলা আর রাজনীতি কি এক হল?
মজা করে বললাম, ওদেশের রাজনীতির খবর আর কতটুকুই বা পাই! শেখ হাসিনাকে চিনতাম। তিনিও দেশ ছাড়া। বেচারাকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এমনকী তাঁর মৃত বাবাও রেহাই পাচ্ছেন না। বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। তাঁর ধানমন্ডির বাড়িও তিনদিন ধরে ভাঙা হয়েছে। সরকার কিছুই করতে পারেনি। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে।
এদের দুজনের কথা বললেই হবে? বাংলাদেশে আর কেউ থাকে না?
কিছুটা মজা করেই বললাম, তসলিমা নাসরিন বলে একজন থাকত। লেখালেখি করত। কবে যে দেশ ছেড়েছে, নিজেও ভুলে গেছে। বাংলাদেশে তাঁরও ঠাঁই হয়নি। হুমায়ুন আহমেদকে চিনতাম। ভদ্রলোক মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন। এখন তাঁর স্ত্রীকেও নাকি শুনছি জেলে ভরেছে।
এবার তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, বাংলাদেশের কয়েকটা লোক বলছে কিনা কলকাতা দখল করে নেবে। কতবড় সাহস ভাবুন।
—সত্যিই তো। কয়েকটা পাগল একটা প্রলাপ বকে কত প্রচার পেয়ে গেল বলুন তো। আখতারউজ্জামান উলিয়াস এত এত লিখলেন। হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুজ্জামানরা কত লিখলেন। কেউ জানতেও পারল না। কেউ এক পাতা পড়েও দেখল না। আর এই চারটে উন্মাদকে আমরা সবাই কেমন চিনে গেলাম। আসলে, ওই উন্মাদগুলো জানত, তাঁদের পাগলামিকে ওদেশের লোক বা মিডিয়া হয়তো তেমন পাত্তা দেবে না। কিন্তু এই দেশের লোক বা মিডিয়া ঠিক তাদের হিরো বানিয়ে দেবে।
ইউনুস তো পাকিস্তানের কথায় চলছে।
— ঠিক বলেছেন। মোদির কথায় আমেরিকা ওঠা–বসা করে। চীন, জাপান, রাশিয়া সবাই মোদির নাম শুনলেই কাঁপে। মোদি চাইলেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু পাশের পুঁচকে দেশটা কেন যে পাত্তা দিচ্ছে না, কে জানে! সব ওই নেহরুর জন্য। নেহরু ছিল বলেই বাংলাদেশেই এই আস্পর্ধা।
ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে কোথায় যে পালিয়ে গেলেন, আর খুঁজেই পেলাম না।