কালীঘাটের কাকু নয়, আসলে ভেন্টিলেশনে আছে সিবিআই

রক্তিম মিত্র

যাঁরা একটু আধটু বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা কাকাবাবু বলতে বুঝতেন একজনকে। মুজাফ্ফর আহমেদ। যাঁরা সাহিত্যের অনুরাগী, তাঁদের কাছে আবার কাকাবাবু মানে ডিটেকটিভ রাজা রায়চৌধুরি। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক আঙিনায় গত দু’‌তিন বছরে ‘‌কাকু’‌ বললেই অন্য একটি নাম ভেসে উঠছে। বিশেষ করে কালীঘাটের কাকু বললে একডাকে সবাই তাঁকে চেনেন। বরং, তাঁর যেটা আসল নাম, সেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বললে অনেকে নাও চিনতে পারেন।

গত দু’‌তিন দিন ধরে কাগজে বেরোচ্ছে, তাঁর অবস্থা নাকি সঙ্কটজনক। তাঁকে নাকি ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। কী জানি, কোনদিন হয়তো তাঁর মৃত্যু সংবাদও আসবে। শোকের বন্যা বইবে। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব বাজারে ছেড়ে দেবেন। অথবা, এমন হাবভাব করবেন, যেন কাকুকে তিনি চেনেনই না।

এই মুহূর্তে ‘‌কাকু’‌ চলে গেলে কার সবথেকে সুবিধে?‌ বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কাকুর একটা বাক্য স্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে, ‘‌আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না’‌। কী খাঁটি কথাটাই না বলেছিলেন!‌ সত্যিই, দু’‌বছর পেরিয়ে গেল। তাঁর ‘‌সাহেব’‌কে কেউ ছুঁতেই পারল না। না সিবিআই, না ইডি। না মোদি, না অমিত শাহ।

সত্যিই কি ‘‌কাকু’‌ সঙ্কটজনক!‌ আসলে, সঙ্কটজনক অবস্থা হল সিবিআই আর ইডি–‌র। কাকু নয়, এই দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সিই আসলে ভেন্টিলেশনে রয়েছে। এই দুই এজেন্সি নিজেদের এমন স্তরে নামিয়ে এনেছে, তাদের আদৌ শ্বাস–‌প্রশ্বাস চলে কিনা সেটাই সন্দেহ। কিছু পেটোয়া চ্যানেল যেন তাদের ভেন্টিলেশন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।

সেই কবে আদালত বলেছিল কাকুর ভয়েস স্যাম্পল টেস্ট করতে। দিন গেল, মাস গেল। সিবিআই হাত গুটিয়ে বসে থাকল। এদিকে কাকু ভর্তি হলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সমস্যা হার্টের, অথচ ভর্তি করা হল চাইল্ড ওয়ার্ডে। সুপার দিনের পর দিন খেলিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, এখন ভয়েস স্যাম্পল টেস্ট করলে সমস্যা হতে পারে। আসলে, তিনি বিলক্ষণ জানতেন এই সিবিআইয়ের মুরোদ কত। তিনি জানতেন, এই সিবিআই–‌কে বুড়ো আঙুল দেখানোই যায়।

পরে আদালতের ধাঁতানি খেয়ে অন্য হাসপাতালে যদিও বা ভয়েস টেস্ট হল, সেই স্যাম্পল কোথায় যে গেল, তার রিপোর্ট এল কিনা, ধোঁয়াশা থেকেই গেল। মাঝে মাঝে গুঞ্জন ওঠে, রিপোর্ট নাকি আদালতে জমা পড়তে চলেছে। সেই স্যাম্পল কাকুর কিনা, আজও কেউ ঝেড়ে কাশল না। না সিবিআই, না আদালত। যে দেশে কথায় কথায় ‘‌ডিজিটাল ইন্ডিয়া’‌র হুঙ্কার, যে দেশে ভিখারিরা ভিক্ষা নেন কিআর কোডে, সেই দেশে একটা ভয়েস সেই কাকুর নাকি কাকুর নয়, সেটা দু’‌বছরেও বলা গেল না।

এমন সিবিআই, এমন ইডি থাকলে যে কোনও অপরাধী চরম নিশ্চিতে থাকতে পারে। সাক্ষীরা খুন হয়ে যাচ্ছেন, সিবিআই নীরব। যে কাকুকে জেরা করে নানা তথ্য পাওয়া যেত, দু বছর ধরে সেই কাকুকে রাজ্য সরকারের জেলেই ফেলে রাখা হল। জেরা করার চেষ্টাটুকুও দেখা গেল না। এখন সেই কাকুর মৃত্যু হলে আর জেরার সুযোগটুকুও থাকবে না।

কাকু বরং বেঁচে থাকুন। এমন সিবিআই থাকার থেকে না থাকা ঢের ভাল। তাই কাকুর আগে সিবিআই এর অপমৃত্যু হোক।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.