ওই দূর থেকে ছুটে আসছে ট্রেন| কাশ বন পেরিয়ে সেই ট্রেন দেখতে ছুটছে দুজন| এই দুটো লাইনই যথেষ্ট| এই দুজন কে, বাঙালিকে আর বলে দিতে হবে না| মনের মধ্যে তৈরি হবে এক দৃশ্যকল্প| আঁকা হয়ে যাবে একটা চিরন্তন ছবি|
এতটাই কালজয়ী সেই মুহূর্ত| পিঠোপিঠি দিদি আর ভাই বললেই বাঙালি মনে মনে তাদের দূর্গা আর অপু ভেবে নেয় | দুর্গার আরেক নাম উমা| কী আশ্চর্য!! দুর্গার ভূমিকায় সত্যজিৎ রায় যাকে বাছলেন, তার নামও উমা| তখন তার কতই বা বয়স হবে! দশ- বারো| সে প্রায় সাত দশক আগের কথা| কিন্তু বাঙালি এখনও সেই মুখটাই মনে রেখেছে| এক মুহূর্ত দেখেই সচেতন বাঙালি বলে দিতে পারে, মেয়েটি হলো পথের পাঁচালির সেই দূর্গা| তিনি এতদিন বেঁচে ছিলেন কিনা বাঙালি জানতেও চায়নি| পরে তার চেহারা কেমন ছিল, বাঙালির তা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথাও ছিল না| বাঙালি সেই সাত দশক আগের মুখটাই মনে রাখতে চেয়েছে|
সম্প্রতি প্রয়াত হলেন সেই উমা দাশগুপ্ত| সেদিনের সেই দূর্গা| এতদিন আড়ালেই ছিলেন | ওই একটি ছবির পর আর কোনো ছবি করতে চাননি | বারবার ডাক এসেছে| সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন| নানা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ এসেছে| অধিকাংশ আমন্ত্রণ ফিরিয়েই দিয়েছেন | সেদিনের সেই অপু, অর্থাৎ সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনেকটা উমা দেবীর মতোই| তিনিও আর কখনো পর্দার সামনে আসতে চাননি| তিনিও এখনও নিজেকে গুটিয়েই রেখেছেন |
বাংলা ছবির অবিস্মরণীয় এই জুটি আমাদের কী শিখিয়ে গেল! সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাক্ষন যখন নিজেকে জাহির করার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা, তখন এই দুই কালজয়ী শিল্পী কীভাবে নিজেদের আড়ালে রেখেছহিলেন | সত্তর বছরের বেশি সময় ধরে কী অদ্ভুত সংযম দেখিয়ে গেছেন| এতো হাতছানি, এতো প্রলোভন কী হেলায় উপেক্ষা করেছেন! তারা নিজেরাও হয়তো ছেয়েছেন, বাঙালি সেই শাশ্বত ও চিরন্তন ছবিটাই মনে রাখুক|
হ্যা, বাঙালি সেই ছবিটাই মনে রাখবে | উমা দাশগুপ্তর মৃত্যু হতে পারে| কিন্তু দুর্গার মৃত্যু নেই |