রক্তিম মিত্র
আবার অমিত শাহ এলেন। আবার একপ্রস্থ ভাষণ দিয়ে গেলেন।
নিজের ব্যর্থতার কথা কীভাবে ঢালাওভাবে প্রচার করতে হয়, তা এই মানুষটিকে দেখে শিখতে হয়। প্রতিবার তিনি আসেন। ঘুরে ফিরে সেই একই চর্বিত চর্বন। তিনি ভাবেন, তিনি বোধ হয় দারুণ একটা ভাষণ দিলেন। তিনি বোধ হয় মার্গ দর্শন করালেন। ঘটনা হল, বিজেপির একজন ব্লক স্তরের নেতাও তাঁর থেকে ভাল বক্তৃতা করেন।
প্রতিবার তিনি এসে বলেন, প্রচুর অনুপ্রবেশ হচ্ছে। তাতে দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। অনুপ্রবেশ আটকানো কার দায়িত্ব? উত্তর হল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। খোদ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে বলে বসছেন, অনুপ্রবেশ আটকাতে হবে। নিজের গালে নিজেকে এমনভাবে থাপ্পড় মারতে খুব কম লোককেই দেখা যায়।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে দেখে সত্যিই বড় মায়া হয়। অমিত শাহ এলেই তাঁরা নাকি দারুণ উজ্জীবিত হন। হায় রে। এই রাজ্যে বিজেপির বিস্তারে সবথেকে বড় বাধা যে মোদি আর অমিত শাহ, এই সত্যিটা কবে যে তাঁরা বুঝবেন! প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরা মাঝে মাঝেই এসে সারদার প্রসঙ্গ তোলেন। ঘটনা হল, দশ বছর ধরে সিবিআই তদন্ত করছে। এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার দায় কার? তার পরেও কোন মুখ নিয়ে সারদার কথা উচ্চারণ করেন?
শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে সারা রাজ্য তোলপাড়। তিন বছর হয়ে গেল, সিবিআই এর হাতে তদন্ত। মাঝে মাঝে ইডিও ঢুকে পড়ছে। সীমাহীন ব্যর্থতা। এক্ষেত্রেও তারিখ পে তারিখ চলছে। ট্রায়ালই ঠিকঠাক শুরু হল না। এই মামলাও বিশ বাঁও জলে যেতে চলেছে। একের পর এক অভিযুক্ত (এখনও অভিযুক্ত বলতে হচ্ছে, এটা সিবিআই এর লজ্জা) জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা ভাষণ দিচ্ছেন, প্রমাণ হয়ে গেল, আমি নির্দোষ। বালি, কয়লা থেকে একের পর এক তদন্তে সিবিআই ছড়িয়ে লাট করছে। শুধু তদন্তে গড়িমসি করছে তাই নয়। প্রমাণ লোপাটে পর্যাপ্ত সাহায্যও করছে।
এমনকী আরজি কর কাণ্ডই দেখুন। দু’মাস পর যে চার্জশিট জমা পড়ল, তাকে পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া কী বলবেন? যে কোনও থানার সিভিক ভলান্টিয়ারও এই অপদার্থদের থেকে ভাল তদন্ত করবেন। সিবিআই এর এই অপদার্থতার জন্যই রাজ্য পুলিশ এত প্রমাণ লোপাটের পরেও বহাল তবিয়তে আছে। তারা জানে, সিবিআই ঘোড়ার ডিম করবে। কোনও সম্মান বা সমীহ নয়, এই তাচ্ছিল্যটাই আজ সিবিআই এর প্রাপ্য।
এই সিবিআই কে চালায়? তৃণমল চালায় না। সিপিএম চালায় না। কংগ্রেসও চালায় না। দেশের সবথেকে অপদার্থ একটি সংস্থার দায়িত্বে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনিই সিবিআই–কে এমন হাস্যকর জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি নাকি আয়রন ম্যান। তিনি নাকি চানক্য। তিনি নাকি দারুণ সাহসী। তাহলে সিবিআই মাসের পর মাস ঘুমিয়ে থাকে কেন? সত্যি করে বলুন তো, এমন ব্যর্থ এবং এমন ভীতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই দেশ কখনও দেখেছে? এমন সীমাহীন ব্যর্থতার পর তিনি কিনা এই রাজ্যে এসে কর্মীদের চাঙ্গা করেন।
এই লোককে দেখে যদি রাজ্য বিজেপি চাঙ্গা হতে চায়, তাহলে তাদের প্রতি করুণা ছাড়া আর কী দেখাবেন? তিনি যে আস্ত একটি বোঝা, এই সহজ সত্যিটা রাজ্য বিজেপি নেতারা কবে আর বুঝবেন!