বিরোধীরা কী বলবেন, তিনি ঠিক করে দিচ্ছেন, এটাই কুণালের সাফল্য

রক্তিম মিত্র

সেই বিজন সরকারকে বহুদিন দেখি না। একসময় টিভির বিতর্কে নিয়মিত মুখ ছিলেন এই শিক্ষক। তখনও পিকের টিম আসেনি। তখনও মুখপাত্রদের এভাবে ট্রেনিং দেওয়ার চল ছিল না। শাসকদলের হয়ে প্রায় একাই ব্যাটিং করে যেতেন এই বিজন বাবু। আর ফেসবুকের বাম যোদ্ধারা সারাক্ষণ তাঁকে খিল্লি করতেই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁকে নিয়ে কত কার্টুন, কত মিম যে দেখা যেত!‌ আর টিভি যোদ্ধারাও বিজনকে পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে ভাবতেন, বিরাট এক যুদ্ধ জয় করে ফেলেছেন।

এখন বিজন সরকার কোথায় আছেন, জানি না। টিভি স্টুডিও ছাড়া কীভাবে তাঁর সন্ধে কাটছে, তাও জানি না। কিন্তু গালাগাল দেওয়ার নতুন একজনকে পাওয়া গেছে। কুণাল ঘোষ। রোজ সকাল হলেই কুণাল ঘোষ তাঁর ফেসবুক বা টুইটারে কিছু একটা দু–‌চার লাইন লিখে দিচ্ছেন। তাই নিয়ে দিনভর চলছে আলোচনা। অনেক বাম ফেবুজীবীর এখন একটাই কাজ, কুণাল ঘোষ কী লিখলেন, অমনি হয় তাঁর ওয়ালে গিয়ে তাঁকে খিস্তি দাও। নইলে, এই নিয়ে নিজের ওয়ালে চর্চা শুরু করে দাও।

কুণালবাবুর সহিষ্ণুতা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। তিনি জানেন, কোন পোস্টের পর কী গালাগাল অপেক্ষা করছে। তারপরেও তিনি সেগুলো বেশ উপভোগ করেন। যাবতীয় প্রচারের সার্চলাইট চলে যায় তাঁর দিকে। তিনি অন্তত নিজের ভূমিকায় সফল। আন্দোলন থেকে মানুষের কথাবার্তা, আলোচনা অন্য অভিমুখে নিয়ে যেতে তিনি ষোল আনা সফল। কঠিন পিচেও যেভাবে ব্যাট করে চলেছেন, যেভাবে বিপক্ষ শিবিরের আক্রমণকে একা নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন, শিবের মতো তাঁকেও নীলকণ্ঠ বলাই যায়।

কুণালবাবুর ওয়ালে একবার চোখ বোলালে যে সব কমেন্ট চোখে পড়ে, তার অধিকাংশর মধ্যে না আছে শিক্ষার ছাপ, না আছে পাল্টা যুক্তি। একটাই কথা ঘুরেফিরে আসে, ‘‌চোর কুণাল’‌। কেউ বলেন, ‘‌জেল খাটা আসামী’‌। যেন এটা বলেই বিরাট এক প্রতিবাদ জানিয়ে দিলেন। জেলে থাকার সময় তিনি কী কী বলেছিলেন, এমন দু একটা রেফারেন্স তুলে এনে ভাবেন, বিরাট একটা থিসিস পেপার বোধ হয় সাবমিট করা হল। যেন, কুণাল ঘোষ এসব জানেন না। আপনি একটা কমেন্ট করার মানে বোঝেন?‌ আপনি কমেন্ট করলেন মানে, সেই পোস্টটা আপনার যে বন্ধুরা দেখেননি, তাঁদের কাছেও পৌঁছে দিলেন। আপনি কমেন্ট দিলেন মানে, সেই পোস্টটা একেবারে ওপরের দিকেই থাকার বন্দোবস্ত করে দিলেন। যাঁর কাছে কোনও দিনই ওই পোস্ট পৌঁছতো না, তিনি মোবাইল চালু করলেই যেন ওই পোস্টটা উপরের দিকে পান, সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। কমেন্ট করা ফেবু বিপ্লবীরা এই সামান্য বিষয়টুকু বোঝেন না!‌

রাজনৈতিকভাবে কি সত্যিই কুণালবাবুর সেই গুরুত্ব আছে!‌ তিনি না মন্ত্রী, না সাংসদ। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীও নন। শুধুমাত্র একজন মুখপাত্র (‌যদিও সেই পদও ঢাকঢোল পিটিয়েই ছেড়ে দিয়েছিলেন)‌। তাঁকে এতখানি গুরুত্ব দেওয়া কি সত্যিই খুব জরুরি?‌ কিন্তু ফেবুজীবীরা তো বটেই, এমনকী বাম নেতৃত্বও তাঁকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন।

মেসি খেলা আর মেসি না খেলার মধ্যে তফাত কোথায়?‌ মেসি যদি কিছু নাও করেন, তাহলেও তাঁর পেছনে বিপক্ষের তিন–‌চার জন পড়ে থাকেন। সেই সুযোগে অন্যরা ফাঁরা জায়গা পেয়ে যান। কুণালবাবুও সব আলো, সব প্রচার নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন। সামান্য পোস্টকে ঘিরে দিনভর ব্যস্ত রয়েছে মিডিয়া। প্রতিক্রিয়া দিনভর ব্যস্ত থাকছেন বিরোধীরা। ফলে, যেদিকে আলো পড়ার কথা, সেদিকে আলো পড়ছে না। এই ফাঁদটা বিরোধীরা বুঝেও বুঝছেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.