বছরটা ২০১৫। মহালয়া পেরিয়ে গেছে। পুজোর তিন–চার দিন আগে হঠাৎ এল প্রস্তাবটা। একটা অনলাইন পুজো সংখ্যা করলে কেমন হয়! সেই রাতেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, একবার ঝুঁকি নিয়েই দেখা যাক। প্রস্তুতি না থাকুক, পাগলামিটা ছিল পুরোদমে। মনে আছে, মাত্র তিনদিনের মাথায় সোয়া একশো পাতার একটা শারদ সংকলন বেরিয়েছিল। বিষয় ধরে ধরে একটার পর একটা লেখা তৈরি হচ্ছে। ই–মেল মারফত পৌঁছে যাচ্ছে বিশেষ ঠিকানায়। দিন–রাত এক করে একের পর এক পাতা তৈরি করে প্রায় অসাধ্যসাধন করেছিল বন্ধুবর শুভজিৎ বোস। পুজোর ঠির আগের দিন, রাত বারোটায় হয়েছিল আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। কীভাবে মাত্র তিনদিনে পুজো সংখ্যা রাতের আলো দেখেছিল, সে কথা ভাবলে এখনও কেমন রোমাঞ্চ জাগে।
তখনও নিউজ পোর্টাল জিনিসটা ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে সেখানে গজিয়ে ওঠেনি। কর্পোরেট সংস্থাগুলিও হামলে পড়েনি। তখনও ডিজিটাল মিডিয়া ‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ হয়ে ওঠেনি। বাংলায় তখন হাতে গোনা কয়েকটি নিউজ পোর্টাল। তাদের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতেই ছিল বেঙ্গল টাইমস। রাজনীতি, সাহিত্য, সিনেমা, জেলা, ভ্রমণ, খেলা, স্পেশ্যাল ফিচার— নানা বিভাগের ডালপালা। আগ্রহী পাঠকদেরই কেউ কেউ দিব্যি লেখক হয়ে উঠছেন। ই–মেল উপচে পড়ছে নানা স্বাদের লেখায়। কোনওটা এককথায় অনবদ্য, কোনওটা আবার একটু কাঁচা হাতের, একটু ঘসে মেসে নিতে হচ্ছে। প্রতিদিন আপলোড হয়ে চলেছে একের পর এক ঝাঁঝালো লেখা, আকর্ষণীয় ফিচার। পাঠক মহলে খুব দ্রুতই সাড়া ফেলেছিল সেই নবাগত ওয়েবসাইট।
এই দশ বছরে কতকিছু বদলে গেল। কত পোর্টাল, কত ইউটিউব চ্যানেল গজিয়ে উঠল। কত ভুয়ো খবরের ছড়াছড়ি। কত পোর্টাল দারুণভাবে সাড়া জাগিয়েও অকালে হারিয়ে গেল। কত নতুন নতুন ভাবনা। কত নতুন নতুন ছেলেমেয়ে কাজ করছে এই ভার্চুয়াল মিডিয়ায়। শুধু লেখা নয়, প্রায় সব সাইটই ভিডিও আপলোড করছে। ফেসবুক লাইভ করছে। প্রযুক্তিকে কত সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন চটজলদি ফাস্ট ফুডের আবহে সাবেকি বেঙ্গল টাইমস তো পিছিয়ে পড়বেই। না রয়েছে কর্পোরেট আনুকূল্য, না রয়েছে যথার্থ টিমওয়ার্ক, না রয়েছে ঢাক পেটানোর প্রযুক্তিকে দারুণভাবে ব্যবহার করার মুন্সিয়ানা।
অগত্যা, বেঙ্গল টাইমসের চরিত্রেও কিছু বদল এসেছে। দৈনন্দিন খবরের বদলে বিশ্লেষণ, ফিচারে জোর দেওয়া হয়েছে। রসগোল্লার বদলে সন্দেশ–বরফিতে জোর। যেন তিন–চারদিন পরেও টাটকা মনে হয়। অফস্টাম্পের বাইরের অনেক বল ছেড়ে দিতেই হয়। আবার ইচ্ছে থাকলেও সময় ও প্রস্তুতির অভাবে অনেক বিষয় ছোঁয়াই যায় না। অনিয়মিত হয়েছে, হোঁচট খেয়েছে। ধুলো ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। গত দশ বছরে যেমন নিয়ম করে বেরিয়েছে পুজো সংখ্যা, তেমনই লকডাউনের সময় থেকে প্রতিমাসেই একটা বা দুটো ই–ম্যাগাজিন। গত পাঁচ বছরে ই–ম্যাগাজিন ও ই–বুক মিলিয়ে সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবেই একশো ছাপিয়ে গেছে। সবগুলো যে দারুণ সাড়া ফেলেছে, এমন নয়। তবে, এইসব লেখাই যখন সোশ্যাল সাইটে হুবহু ঘুরে বেড়াতে দেখি, তখন মনে হয়, লেখাগুলো হারিয়ে যায়নি।
এবার শারদ সংকলন। কিছুটা বিলম্বিত। তবে সেই বিলম্ব কিছুটা ইচ্ছাকৃত। অন্যরা জুলাইয়ে বের করে দিল বলে আমাদের জুন মাসে বের করে দিতে হবে, এমন ছেলেমানুষির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকাই ভাল। গায়ে পুজোর গন্ধ না থাকলে কীসের পুজো সংখ্যা! প্রস্তুতি ছিল। আবার শেষবেলার তাড়াহুড়োও ছিল। চাইলে কলেবর আরও বাড়ানোই যেত। কিন্তু লোকের পড়ার সময় কই! তাছাড়া, বেশি বড় হলে আপলোড করা, শেয়ার করা, ই মেলে অ্যাটাচ করা–এসব যান্ত্রিক সমস্যা থাকে। পরিসর একটু কম হলে প্রযুক্তিগত সেই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়। তাই সেঞ্চুরির আগেই থেমে যাওয়া। তাছাড়া, একগুচ্ছ লেখা জুড়ে দিয়ে পাঠককে বেশি বিড়ম্বনায় না ফেলাই ভাল।
পড়ে ফেলুন। পুজোর পর বেঙ্গল টাইমসকে আরও ঝকঝকে চেহারায়, আরও নতুন আঙ্গিকে হাজির করার প্রতিশ্রুতি রইল। সেইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ই–ম্যাগাজিনের চেষ্টাও জারি থাকবে।
স্বরূপ গোস্বামী
সম্পাদক
বেঙ্গল টাইমস
*******************