শ্রাবণ রায়
প্রতিবার পুজো এলেই অদ্ভুত একটা লড়াই শুরু হয়ে যায়। ঠিক পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর দিনে একসঙ্গে পাঁচ–ছয় খানা ছবি মুক্তি পেয়ে যায়। কাগজে শাড়ি, জুতোর ঢাউস বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সিনেমারও পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন। কোনটা কীসের বিজ্ঞাপন, বুঝে ওঠাই মুশকিল।
আচ্ছা, পুজোয় মানুষের কি আর কোনও কাজ থাকে না? সে হলে–হলে সিনেমা দেখে বেড়াবে! সে রাস্তায় ঘুরবে না! সে পাড়ায় আড্ডা দেবে না! সে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবে না! সে মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকে পড়বে? পরিচালকরা বোধ হয় এমনটাই ভাবেন। তাঁরা ধরেই নেন, লোকের আর কোনও কাজকম্মো নেই। তাঁরা দয়া করে সিনেমা বানিয়েছেন। লোকে সেগুলো দেখে জীবন ধন্য করবে।
এবারেও তাই। একসঙ্গে এতগুলো ছবি মুক্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কদিন ধরেই চ্যানেলে চ্যানেলে তার নানা প্রোমো চলছে। শিবপ্রসাদ–নন্দিতা জুটি মানেই দর্শকদের কাছে অন্য এক আকর্ষণ। এবার তাঁদের চমক বহুরূপী। আবীর–ঋতাভরীর জুটি তো আছেই। সঙ্গে শিবপ্রসাদ নিজেও আছেন। গতবছর রক্তবীজের পর অন্যরকম এক থ্রিলার। হলে গিয়ে দেখার ইচ্ছে হতেই পারে। দেব আসছেন ‘টেক্কা’ নিয়ে। গতবার বাঘাযতীন তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। এবার টেক্কার পর কি দেব বাকিদের টেক্কা দিয়ে অনেকটা এগিয়ে যাবেন? পাগলু, খোকাবাবু ইমেজ ছাপিয়ে দেব এখন অন্যরকম আঙ্গিকে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন। এদিকে, মিঠুন আসছেন শাস্ত্রী নিয়ে। সদ্য দাদাসাহেব ফালকে পেলেন। ফলে, এই ছবিকে ঘিরেও উৎসাহ থাকবে, বলাই বাহুল্য। একসঙ্গে বেরোচ্ছে তিনখানা ছবি। দর্শক কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন?
একই ঘটনা ঘটেছিল গত বছর। পুজোর ঠিক আগেই শিবপ্রসাদ–নন্দিতা জুটি এনেছিলেন রক্তবীজ। শ্রীমান দেব এলেন বাঘাযতীনকে নিয়ে। সৃজিত মুখার্জিই বা পিছিয়ে থাকেন কেন! তিনি এনে ফেললেন দশমাবতার। অরিন্দম শীল। তাঁকেও কিছু একটা করে দেখাতে হবে। মোদ্দা কথা, ছাপ রেখে যেতে হবে। অতএব, তিনি হাজির করলেন মিতিন মাসিকে। তবু ভাল, রাজ চক্রবর্তী আবার নতুন করে কিছু ‘মহাপ্রলয়’ ঘটাননি। এঁদের মধ্যে কৌশিক গাঙ্গুলি সত্যিই ব্যতিক্রম। এই ইঁদুর দৌড়ে কখনই তাঁকে সামিল হতে দেখি না। পুজোতে রিলিজ করতেই হবে, তিনি অন্তত এমন ছেলেমানুষিটা করেন না। তাঁর ছবি নিজের সময়মতো আসে। তাঁকে দেখে বাকিরা একটু শিখতে পারেন না!
আচ্ছা, একসঙ্গে এত ছবি আনার হুড়োহুড়ি কেন? এতে কার লাভ হচ্ছে? ধরা যাক কেউ টেক্কা আর বহুরূপী দুটোই দেখতে চান। অন্য সময় হলে হয়তো দুটোই দেখতেন। কিন্তু পুজোর আবহে সব কাজ ফেলে তিনি কি সিনেমা দেখে বেড়াবেন! ফলে, যা হয়! একটা দেখা হয়, অন্যগুলো না দেখাই থেকে যায়। আবার পুজো পেরোলেই হল থেকে ছবিগুলো সরে যায়। তখন আর ইচ্ছে থাকলেও দেখার উপায় থাকে না। কবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে, সেই অপেক্ষায় থাকতে হয়।
এতে কার ভাল হচ্ছে? বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ভাল হচ্ছে? পরিচালকদের ভাল হচ্ছে? হল মালিকদের ভাল হচ্ছে? এমনিতেই দর্শক সীমিত। তার ওপর তা যদি ভাগ হয়ে যায়, তাতে নিজেদের পায়েই কুড়ুল মারা হয়। নিজেদের মধ্যে এমন ঝগড়া না করে, একটা সমন্বয়ে আসা যায় না! শাহরুখ–সলমন খানরা একসঙ্গে ছবি বাজারে আনেন না। আমির খান বা অক্ষয় কুমারের ছবিও একসঙ্গে আসে না। একজনের ছবি মুক্তি পেলে, আরেকজন তারিখ পিছিয়ে দেন। তাঁরাও জানেন, এমন ছেলেমানুষি ঝগড়ায় কারও কোনও লাভ হয় না। বাংলার পরিচালকরা এই সহজ সত্যিটা কবে বুঝবেন!