রক্তিম মিত্র
শুরুতেই বেশি ধানাই পানাই না করে সোজা কথাটা সোজা বলে নেওয়াই ভাল। সিবিআই এর প্রতি আমার এতটুকুও আস্থা নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি, সিবিআই কাজের কাজ কিছুই করতে পারবে না। কোর্টও তারিখের পর তারিখ দিয়ে যাবে। বিচারের নামে সেই প্রহসনই মঞ্চস্থ হতে চলেছে।
যাঁরা জাস্টিস ফর আর জি কর স্লোগান তুলে প্রায় একমাস ধরে আন্দোলন করছেন, তাঁদের স্যালুট। তাঁরা হাল ছাড়েননি। তাঁরা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা এত শারীরিক ধকল, পেশাগত এতরকম ঝুঁকি নিয়েও লড়ছেন। কোনও কুর্নিশই তাঁদের জন্য যথেষ্ট নয়। এর সামান্যতম তাগিদ যদি সিবিআই দেখাত, তাহলে অপরাধীরা এত নিশ্চিন্তে থাকতে পারত না।
লিখে রাখুন, কয়েকদিন পর থেকেই সিবিআই এর উকিল কাঁদুনি গাইতে শুরু করবেন, ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে।’ এটা অনেক পুরনো রোগ। অনেকে হয়তো বলে বসবেন, ‘সত্যিই তো, সিবিআই কী করবে? পুলিশ তো আগেই অনেক প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে।’
খুব সহজ একটা প্রশ্ন, পুলিশ প্রমাণ লোপাট করার সাহস পায় কোত্থেকে? কারণ, তাঁরা জানেন, সিবিআই নামক একটা অপদার্থ প্রতিষ্ঠান আছে। কাঁদুনি গাওয়া ছাড়া যারা কার্যত কিছুই করতে পারে না। একদল এসে ভাঙচুর করে গেল। তারা এতখানি সাহস পেল কোত্থেকে? কারণ, তারা জানে, পুলিশ কিছুই করবে না। ঠিক তেমন, পুলিশ জানে, সিবিআই কিছু করবে না। আবার সিবিআই জানে, আদালত একটু ভর্ৎসনা করবে। তার বেশি তারাও কিছু করবে না। বিচারপতিরাও জানেন, কখন ঘুমিয়ে থাকতে হয়। কখন কোন ছুতোয় মামলা পিছিয়ে দিতে হয়।
যারা ভাঙচুর করল, সেই লাল্টু–পল্টুর দল তো আর নিজে থেকে আসেনি। নিশ্চিয় গাড়ি বোঝাই করে কেউ তাদের পাঠিয়েছিল। তারও একটা মাথা ছিল। সেই মাথাটা কে? এটা ধরা কি খুব কঠিন? এর জন্য কি সিবিআই হতে হয়? গোটা ঘটনার তদন্ত যখন সিবিআই এর হাতে, তখন ভাঙচুরের তদন্ত খামোখা পুলিশের হাতে থাকবে কেন? সহজ কথা, পুলিশ কমিশনারকে ডেকে বলা, ‘বস্তির দু একজন ছিঁচকে চোর ধরে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন না। দুদিন সময় দিলাম। মাথাকে ধরে এনে দিন। নইলে, তৃতীয় দিন আপনি হাজতবাসের জন্য তৈরি থাকুন।’ বিনীত গোয়েল তো বাচ্চা। তাঁর চোদ্দ পুরুষ বাপ বাপ বলে আসল মাথার নাম জানিয়ে দিত। কিন্তু সিবিআই নামক আপাদমস্তক সংস্থাটি এসব কিছুই করবে না। তারা এটা–সেটা আবোল তাবোল বিষয় সামনে এনে আসল বিষয়টাকে গুলিয়ে দেবে। কোথায় সিরিঞ্জ পাচার হচ্ছে, কোথায় এফআইআর বা সিজার লিস্টে কী ত্রুটি আছে, এসব দুর্বোধ্য টেকনিকাল বিষয় নিয়ে কয়েক হাজার পাতার রিপোর্ট তৈরি করবে। মুখ বন্ধ খামে জমা দেবে। আর দিনের শেষে কাঁদুনি গাইবে, হুজুর ঠিকঠাক প্রমাণ পাওয়া গেল না।
এই তো পরিণতি। আগের মামলা গুলোরও এই পরিণতিই হয়েছে। এবারও ব্যতিক্রমী কিছু হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।
আর সুপ্রিম কোর্ট! সরি মাই লর্ড। নিজেদের সম্মানকে নিজেরাই বড্ড টেনে নামিয়েছেন। সরকারের দালালি করার পুরস্কারও আছে। আবার ঝুলিয়ে দেওয়ার পুরস্কারও আছে। অবসরের পরই কাউকে রাজ্যপাল হতে হবে। কাউকে রাজ্যসভায় যেতে হবে। সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে, যে বিচারপতিরা রাজ্যসভায় বা রাজভবনে গেলেন, তাঁদের ঘৃণা করতে শিখুন। যাঁরা তাঁদের এইসব লোভনীয় পুরস্কার দিলেন, তাঁদের ধিক্কার দিতে শিখুন।
এই ধর্ষণকারীদের অপরাধ অন্তত এঁদের থেকে কম। তাই ধর্ষণকারীর বিচার পরে চাইবেন। সাংবিধানিক পদে বসে যাঁরা রোজ আইন ও সংবিধানকে ধর্ষণ করছেন, আগে তাঁদের চিনতে শিখুন।