টোকিও অলিম্পিকে আমাদের কিছুটা অবাক করেই সোনা জিতেছিলেন নীরজ চোপড়া। সত্যি কথা বলতে কী, আমরা আশাই করিনি। বলা যায়, সেই সোনা ছিল চমকের মতোই।
আর একটা সোনা পেয়ে গেলে যা হয়। আমাদের প্রত্যাশা বাড়তে বাড়তে সেটা অধিকারবোধে পৌঁছে যায়। আমরা বোধ হয় ধরেই নিয়েছিলাম, এবার প্যারিস অলিম্পিকে নীরজ সোনা পাচ্ছেনই। তিনি রুপো পেলে যেন অঘটন। আর ঠিক সেটাই হল। হরিয়ানার যুবক অলিম্পিকে রুপো জিতলেন। আমাদের তেমন হেলদোলই নেই। আমরা এমন হাবভাব করলাম, যেন এ আর এমন কী! আগেরবার সোনা জিতেছিল, এবার সোনা তো এল না!
আসলে, একটা অলিম্পিক পদকের মূল্য কতখানি, আমরা এখনও ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারিনি। তাই বিশ্বের সেরা অ্যাথলিটদের সঙ্গে লড়াই করে রুপো আনলে আমরা উচ্ছ্বসিত হই না। এটা ঘটনা, টোকিও অলিম্পিকের পর থেকে নীরজ ধারাবাহিকভাবে সফল। ডায়মন্ড লিগেও কখনও পেয়েছেন সোনা, কখনও রুপো। একটা সোনার উল্লাসে ভেসে যাননি, বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে নীরবে প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন। এমনকী, এবারও অলিম্পিকের পর সবাই দেশে ফিরে এসেছেন, সংবর্ধনার জোয়ারে কম–বেশি ভেসে গেছেন। কিন্তু নীরজ অলিম্পিকের পর থেকে দেশেই ফেরেননি। নিজেকে মগ্ন রেখেছিলেন ডায়মন্ড লিগের প্রস্তুতিতে। এই সংযম, এই নিষ্ঠা সত্যিই শেখার মতো।
আসলে, এই সোশ্যাল মিডিয়ার আবহে নিজেকে জাহির করার একটা প্রবণতা কম–বেশি সবার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রাসঙ্গিক রাখো, সকাল–বিকেল ছবি পোস্ট করো। নীরজ সত্যিই এঁদের থেকে আলাদা। তিনি সস্তা শিরোনাম থেকে অনেক দূরে। সংবর্ধনার হাতছানি তাঁকে স্পর্শ করে না। তাই অলিম্পিক পদক জয়ের পরেও দেশে না ফিরে বিদেশে নিজেকে প্রস্তুতিতে মগ্ন রাখতে পারেন।
তিনি সত্যিই একজন যথার্থ শিক্ষক। যিনি আমাদের শেখালেন, ঢাকঢোল না পিটিয়ে, প্রচার থেকে অনেক দূরে থেকে কীভাবে নিজের কাজ করে যেতে হয়। কিন্তু আমরা এত সহজে শেখার বান্দা নই। তাই নীরজের রুপোর মাহাত্ম্য বোঝার মতো মানসিকতা আমাদের নেই।