রক্তিম মিত্র
সিবিআইয়ের দুটি চেনা কাঁদুনি আছে। সিবিআই আইনজীবীরা কোর্টে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝেই বলেন, হুজুর, রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
কয়েক বছর পর বলতে শোনা যায়, অনেক প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে।
বিশ্বাস করুন, এই দুটো অভিযোগ যখন শুনি, তখন সিবিআই কর্তাদের প্রতি একটুও করুণা হয় না। বরং রাগ হয়। মনে হয়, অপরাধীদের শাস্তি পরে হবে। আগে এই অপদার্থগুলোকে শাস্তি দেওয়া হোক।
সহজ কথা, সিবিআই তদন্ত কখন দেওয়া হয়? সেই রাজ্য সরকার নিজেরাই তো তদন্ত করতে পারত। সেই রাজ্য তো কোর্টে বারবার এটাই বলে, ‘হুজুর আমার পুলিশ যথেষ্ট যোগ্য ও সক্ষম। তারা সুন্দরভাবে তদন্ত করছে।’ তারপরেও সিবিআই তদন্ত দেওয়া হয় কেন? ১) সিবিআই এর দক্ষতা অনেক বেশি। ২) পুলিশ অনেক সময় রাজ্য সরকারকে বাঁচাতে চায়। প্রভাবশালী কেউ জড়িয়ে থাকলে তাকে আড়াল করতে চায়।
মূলত এইসব কারণেই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে যতগুলি বিষয় সিবিআই–কে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে, সবকটিতেই সিবিআই চূড়ান্ত ব্যর্থ। অবশ্য ব্যর্থ বললে কম বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে, সিবিআই যেন ইচ্ছে করেই ব্যর্থ হতে চেয়েছে। চাইলে, সফল হওয়াই যেত। কিন্তু সিবিআই যেন ধনুকভাঙা পন নিয়ে বসে আছে, একটি ক্ষেত্রেও আমরা তদন্ত শেষ করব না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দেব। মাঝে মাঝেই মনে হয়, একজন সাধারণ কনস্টেবলকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে তিনিও হয়তো এঁদের থেকে ভাল তদন্ত করতেন।
সারদা তদন্ত সেই কবে শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে কয়েকটা ধরপাকড়। তারপর সেই যে শীতঘুমে গেছে, আর জাগানোই যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, সরকার নাকি তদন্তে সহযোগিতা করছে না। আরে বাবা, সরকার করবে না বলেই তো তোমাকে ডাকা হয়েছে। তুমি কী খুঁজে বের করলে? শিক্ষা দুর্নীতিতে কয়েকজন ধরা পড়ল। কিন্তু মাথা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাকুর ভয়েস স্যাম্পল নিতে যেভাবে ইচ্ছে করে লেজে গোবরে হল, তা সত্যিই লজ্জার। কোর্টের ধাঁতানি খেয়ে ৬ মাস পর সেই স্যাম্পল যদিও পাওয়া গেল, তার রিপোর্ট পেতে বছর পেরিয়ে গেল। কেন এই সিবিআই অফিসারদের ঘাড় ধরে জেলে ঢোকানো হবে না? তদন্ত হচ্ছে নাকি তদন্তের নামে ছ্যাবলামি হচ্ছে?
এবার আরজি কর। আদালত দ্রুত সিবিআইকে তদন্তভার দিল। দিনের পর দিন সস্তা নাটকই করে চলেছেন সিবিআই কর্তারা। একদল দুর্বৃত্ত এসে ভাঙচুর চালাল। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হল। এটা পাড়ার লাল্টু–পল্টুর দল করেছে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কে তাদের পাঠিয়েছিল, একটু চেষ্টা করলেই জানা যায়। সিবিআই কাঁদুনি গেয়ে বলবে, হুজুর প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। সহজ প্রশ্ন, যারা প্রমাণ নষ্ট করেছে, তারা এত সাহস পেল কোত্থেকে? কারণ, তারা জানে সিবিআই এর মুরোদ কতটুকু। সারদার যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করে রাজীব কুমার, অর্ণব ঘোষরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। পিজির সুপার কালীঘাটের কাকুর স্যাম্পল টেস্ট মাসের পর মাস ঝুলিয়েছেন। আসলে, তাঁরা জানেন, এই সিবিআইকে পাত্তা দেওয়ার কোনও দরকার নেই। এরা কাঁদুনি গাওয়া ছাড়া আর কিছুই পারে না। হ্যাঁ, একদল অপদার্থ লোক সিবিআই কে আজ এই জায়গায় নামিয়ে এনেছে।
যারা ধর্ষণ করল, খুন করল, তাদের নামগুলো এখনও সামনে আনাই গেল না? এখনও হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে? এর জন্য সিবিআই হওয়া দরকার? যারা ভাঙচুর চালাল, তাদের ধরা কি সত্যিই খুব কঠিন ছিল? অন্তত পুলিশ কমিশনারকে ডেকে এটুকু তো বলা যেত, যারা ভাঙচুর করল, দুদিনের মধ্যে সেই মাথাদের খুঁজে সিবিআই এর হাতে তুলে দিন। নইলে, তৃতীয় দিন আপনি নিজে জেল যাওয়ার জন্য তৈরি থাকুন। বাপ বাপ বলে বিনীত গোয়েল অ্যান্ড কোং অপরাধী ধরতে বাধ্য হত। কিন্তু বিনীত গোয়েল ভাল করেই জানেন, এই সিবিআই কিচ্ছু করতে পারবে না। এই সিবিআইকে খামোখা তিনি পাত্তা দিতে যাবেন কোন দুঃখে!
সিবিআই, সিবিআই করে ধেই ধেই করে লাফানো অনেক হয়েছে। এবার সত্যিই কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। তদন্তের নামে যারা অপরাধীদের আড়াল করছেন, সেই সিবিআই কর্তাদের এবার সাসপেন্ড করা হোক। দরকার হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক। চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য যদি ডাক্তারকে শাস্তি পেতে হয়, তাহলে তদন্তকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য সিবিআই কর্তাদের কেন শাস্তির মুখে পড়তে হবে না?