একটু সংযম দেখানো যেত না!‌

সরল বিশ্বাস

সকালে প্রায় সব কাগজেই বেরিয়েছে ছবিটা। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, রবিন দেব।

বাম নেতৃত্ব হঠাৎ নোবেলজয়ী অর্থনীতির বাড়িতে দেখা করতে গেলেন কেন?‌ শারীরিক কুশল জানতে নয়। সৌজন্য সাক্ষাতেও নয়। নিজেরাই বেরিয়ে এসে বললেন, সিপিএম কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই ব্যাপারে তাঁরা অমর্ত্য সেনকে জানাতে গিয়েছিলেন। ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তাঁর পরামর্শও চাইতে গিয়েছিলেন।

বাম নেতৃত্ব নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। পরামর্শ চাইতেই পারেন। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেই পারেন। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কোথাও যেন খটকা লাগছে। ছবিটা এত দ্রুত এত ‘‌ভাইরাল’‌ হয়ে গেল কী করে?‌

প্রশ্ন হল, অমর্ত্য সেন কি ডেকেছিলেন?‌ নাকি তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গিয়েছিলেন?‌ সম্ভবত দ্বিতীয়টা। সেখানে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি ছিল?‌ নানা অ্যাঙ্গল থেকে ফটোশেসন করা খুব জরুরি ছিল?‌ ছবিগুলো ছাড়ার আগে তাঁর অনুমতি নেওয়া হয়েছিল?‌ নিশ্চয় তিনি আগ বাড়িয়ে বলেননি যে, এই ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ুন, বিভিন্ন কাগজের দপ্তরে পাঠিয়ে দিন।

তাহলে, তাঁকে বিড়ম্বনায় ফেলার কী দরকার ছিল?‌ বাম নেতৃত্ব গেছেন। তিনি সৌজন্য দেখিয়ে কথা বলেছেন। কী বলেছেন, সেটা ঘটা করে লোককে জানানো খুব জরুরি ছিল?‌ বৈঠক হয়েছে, প্রবল উৎসাহে এমন ছবি ছড়িয়ে দেওয়া খুব দরকার ছিল?‌ বিমান বসুকে যেটুকু চিনি,এই ছবি তোলায় বা ছড়িয়ে দেওয়ায় নিশ্চিতভাবেই তাঁর সায় ছিল না। তারপরেও কার অতি উৎসাহে এই ছবি আর তা ভাইরাল করার আয়োজন?‌ পরে দেখলাম, খোদ রাজ্য সম্পাদক গদগদ হয়ে সেইসব ছবি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন।

এর ফল কী হতে পারে?‌ হুট করে কোনদিন মুখ্যমন্ত্রী চলে যেতে পারেন। তিনি তো আবার একগুচ্ছ চ্যানেল সঙ্গে নিয়ে চলে যাবেন। পারলে, লাইভ টেলিকাস্ট করিয়ে বসবেন। তখন অমর্ত্য সেন হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর দু একটা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করে বসলেন। তারপর কী হবে?‌ ফলাও করে সেগুলো কাগজে বেরোবে। ব্যাস, আর দেখতে হচ্ছে না। অমনি, অমর্ত্য সেন ভিলেন হয়ে যাবেন। বাম ফেবুপন্থীরা অমর্ত্য সেনের নামে গাল পাড়তে শুরু করবেন। তিনি ধান্দাবাজ, তিনি চটিচাটা— ইত্যাদি নানা অভিধায় ভূষিত করা হবে।

যে সুন্দর বাতাবরণটা তৈরি হয়েছিল, তাকে দায়িত্ব নিয়ে বিষিয়ে দেওয়া হবে। যাঁর কাছে বাম নেতৃত্ব পরামর্শ চাইতে গেলেন, দুদিন পর বাম সমর্থকদের কাছে তিনিই হয়ে দাঁড়াবেন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।

আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার, অমর্ত্য সেনের কাছে গেছেন, ভাল করেছেন। কিন্তু ছবি তোলার বা সেই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার এই ছেলেমানুষি আচরণ না করলেই পারতেন। নেতারা যদি একটু সংযম দেখাতে না পারেন, তাহলে কর্মীদের কী দোষ?‌ তাঁরাও সারাদিন নিজের ছবি পোস্ট করে চলেন, আর লাইক গুনে যান। এই প্রবণতা আটকানো খুব জরুরি। কিন্তু নেতারাই যদি এতখানি প্রচারপ্রিয় হয়ে ওঠেন, কর্মীদের রাশ কে টেনে ধরবেন?‌ তৃণমূল নেতা কর্মীরা যেমন নানা খারাপ কাজে ঠিক ‘‌অনুপ্রেরণা’‌ পেয়ে যান, ছবিপ্রিয় বাম কর্মীরাও বোধ হয় ‘‌অনুপ্রেরণা’‌ পেয়ে গেলেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.