রক্তিম মিত্র
এমন নয় যে, তিনি ইংরাজি জানেন না। বেশ ভাল জানেন। হিন্দিতে দারুণ সড়গড় না হলেও কাজ চালানোর মতো দিব্যি চালিয়ে দিতে পারেন। হয়তো অন্যদের থেকে সেটাও ভালই বলতে পারেন। কিন্তু তিনি বলতে উঠলেন বাংলায়।
তিনি মানে, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। যিনি সুপ্রিম কোর্টে দুরন্ত সওয়াল করে কপিল সিব্বাল, অভিষেক মনু সিংভিদের মতো আইনজীবীদের নাকানি চোবানি খাওয়ান। তিনি সেদিন রাজ্যসভায় শুরুই করলেন বাংলা দিয়ে।
বলা হল, বাংলার অনুবাদক নেই। তাই এখন বাংলা বলা যাবে না। অন্য যে কেউ হলে ইংরাজির পাণ্ডিত্য ফলাতেন। ইংরাজিতেই বলতে শুরু করতেন। কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াও দরকার ছিল। তিনি বিনীতভাবে বললেন, যে ভাষা দেশকে জনগণমন দিয়েছে, যে ভাষা দেশকে বন্দেমাতরম দিয়েছে, আজ সেই ভাষার অনুবাদক নেই। ভাবতেও কষ্ট হয়।
ওদিক থেকে আওয়াজ আসছে, ‘হিন্দি মে বোলিয়ে’। বিকাশবাবু আবারও বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, আপনারা যতই হিন্দি নিয়ে মাতামাতি করুন, হিন্দি ভাষা বাংলার ধারেকাছেও আসেন না। এই ভাষা দেশকে নোবেল এনে দিয়েছে।
বিকাশবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। রাজ্যসভায় তৃণমূলের তো ১৫ জন সদস্য আছেন। আর কাউকে কখনও তো এমন ভূমিকায় দেখিনি। আসলে, কী লোকসভা, কী রাজ্যসভা। অশিক্ষিত ও অর্বাচীন লোকেদের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। তাঁরা আইননির্মাতা। কিন্তু না বোঝেন আইন, না বোঝেন তার সারবত্তা। সংসদের গরিমা বোঝার মতো বিদ্যেবুদ্ধি অধিকাংশ সদস্যেরই নেই। কোনও বিলের চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ তো দূরের কথা, সেই বিলের মর্মটুকুই অধিকাংশ সাংসদ বোঝেন না। কিন্তু বিকাশবাবু বেশ কযেকটি বিতর্কে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর জাত। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংসদটা হইহল্লা করার জায়গা নয়। বুঝিয়ে দিয়েছেন, একটা বিতর্কে অংশ নিতে গেলে কতখানি পড়াশোনা করে আসতে হয়।
কিন্তু নিজের রাজ্যের প্রতি, নিজের ভাষার প্রতি যে ভালবাসা ও গর্ববোধ, তারও নিদর্শন রেখে গেলেন। সংসদে সমস্ত অনুমোদিত আঞ্চলিক ভাষাতেই বলা যায়। অথচ, বাংলা ভাষার অনুবাদক পাওয়া যায় না। এটা সংসদেরই লজ্জা। কিন্তু বাংলার অন্য কোনও সাংসদকে এই নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। চিৎকার–চেচামেচি না করেও বিকাশবাবু বুঝিয়ে দিলেন, যাঁরা সংসদ চালাচ্ছেন, সংসদের গরিমা তাঁদের হাতে সুরক্ষিত নয়।