স্বরূপ গোস্বামী
কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়। টি২০ বিশ্বকাপ দেখতে দেখতে কথাটা যেন মনে পড়ে যাচ্ছে। কদিন আগেই আইপিএল শেষ হয়েছে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্বকাপ। সেই রঙিন পোশাক, সেই সাদা বল। আইপিএল হয়েছিল ভারতের মাটিতে। আর এই বিশ্বকাপ হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকার মাটিতে। কী আশ্চর্য! খেলার সময়টা প্রায় একই। আইপিএল ছিল সন্ধে সাড়ে সাতটায় শুরু। আর বিশ্বকাপ শুরু রাত আটটায়।
কিন্তু যেসব দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে, সেইসব দেশে তখন সময় কত? কোথাও সকাল দশটা, কোথাও আবার সাড়ে দশটা। আমেরিকায় ততটা গরম না থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে গরম বেশ ভালই, এমনকী ভারতের থেকেও বেশি। সেই দেশে কিনা সকাল দশটায় টি২০ ম্যাচ শুরু হচ্ছে!
টি২০ যখন চালু হল, তার কনসেপ্ট কী ছিল? সাদা বল, রঙিন পোশাক। আর দিন–রাতের ম্যাচ। মোদ্দা কথা, কাজ কামাই করে মানুষের খেলা দেখার সময় নেই। তাই এই ক্রিকেট শুরু হবে সন্ধের দিকে। তিন–সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আইপিএল থেকে শুরু করে ভারতে অনু্ষ্ঠিত ম্যাচগুলি সেই নিয়ম মেনেই হয়। অন্যান্য দেশও যখন নিজেদের মধ্যে সিরিজ খেলে, রাতেই খেলে।
কিন্তু ভারতের সঙ্গে খেলা হলেই যেন নিয়ম বদলে যায়। তখন খেলাটা আর দিন রাতের থাকে না। মোদ্দা কথা, ভারতে যখন সন্ধে সাড়ে সাতটা বা রাত আটটা, তখন খেলা শুরু হবে। তাতে সেই দেশে কটা বাজল, তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। এক বছর আগের ঘটনা। ভারত সেবারও গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। প্রথমে একদিনের সিরিজ। পরে টি২০ সিরিজ। সব ম্যাচই শুরু ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায়। ওই সিরিজেরই শেষ দুটি ম্যাচ ছিল ফ্লোরিডায়। সেখানেও ম্যাচ শুরু সেই ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায়। তারপর ভারত গেল আয়ারল্যান্ড সিরিজে। অর্থাৎ, মার্কিন মুলুক থেকে সোজা ইউরোপ। দুই দেশের মধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেকটাই। কী আশ্চর্য! এবারও খেলা শুরু হল ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটায়।
তার মানে, যে দেশে খেলা হচ্ছে, সেই দেশের ঘড়িতে কটা বাজছে, তার কোনও মূল্য নেই। সেই দেশের দর্শকদের কখন সুবিধা–অসুবিধা, তার কোনও মূল্য নেই। ভারতে কখন সন্ধে সাড়ে সাতটা বাজবে, সেটাই হল আসল কথা। ক্রিকেট বিশ্বের ওপর ভারতের দাদাগিরি কোন স্তরে গেছে, এটাই তার সবথেকে বড় প্রমাণ।
আমাদের দেশে যখন দিনরাতের ম্যাচ হয়, তখন একদিনের ম্যাচ আর টি২০ কখন শুরু হয়! একদিনের ম্যাচ সাধারণত দুপুর দেড়টা–দুটো নাগাদ শুরু হয়। যেন দশটার মধ্যে হয়ে যায়। আর টি২০ শুরু হয় সাতটা–সাড়ে সাতটা নাগাদ। এক্ষেত্রেও লক্ষ্য থাকে দশটা–সাড়ে দশটার মধ্যে খেলা শেষ করে দেওয়ার। যেন দর্শকদের বাড়ি ফিরতে তেমন সমস্যা না হয়। কিন্তু অন্য দেশে আয়োজকদের সেই স্বাধীনতা নেই। তাঁদের নামতে হবে তখন, যখন ভারতে সাড়ে সাতটা বাজবে। তাতে সেই দেশে সকাল হতে পারে, দুপুর হতে পারে, বিকেল হতে পারে।
বিশ্বকাপেও সেই একই ট্রাডিশন। এবার সময়টা আধঘণ্টা পিছিয়েছে। সন্ধে সাড়ে সাতটার বদলে রাত আটটা। অর্থাৎ, খেলা নিউ ইয়র্কেই হোক বা বার্বাডোজেই হোক, শুরু হবে ভারতীয় সময় রাত আটটায়। তাতে সেই দেশে কখন শুরু হল, সেই দেশের লোকেরা দেখতে পেলেন কিনা, কিচ্ছু যায় আসে না। আচ্ছা, নিউ ইয়র্কে কি সত্যিই নৈশালোকের ব্যবস্থা করা যেত না? যারা তিন মাসের মধ্যে আস্ত একটা স্টেডিয়াম তৈরি করতে পারে, খেলা হয়ে গেলে তা আবার গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তাদের কাছে কয়েকটা বাতিস্তম্ভ লাগানো খুব কি কঠিন ছিল?
তাহলে, নৈশালোকের ব্যবস্থা হল না কেন? আপনার, আমার মতো আম ভারতীয়দের জন্যই। আমরা যেন রাত আটটায় খেলা দেখতে পারি, সেইজন্য। আমরা রাত আটটায় দেখতে চাইলে ওখানে সকাল দশটায় শুরু করতে হবে। আর দিনের বেলায় সূর্যের চড়া আলোয় নৈশালোক দরকার নেই। সেই জন্য। এবার বোঝা গেল, খেলা যেখানেই হোক, ভারতে তখন যেন রাত আটটা বাজে।