বিজয় পাল
এবারের ভোটে আমাকে সবথেকে তৃপ্তি দিয়েছে একটি আসনের রায়। সেটি হল ফৈজাবাদ। এই ফৈজাবাদের মধ্যেই পড়ে অযোধ্যা। ভোটের আগে রামমন্দিরের উদ্বোধন করে গোটা দেশে রামমন্দিরের হাওয়া তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। শাসকদল তার কাজের খতিয়ান নিয়ে নির্বাচনে যাবে, সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু গত দশবছর ধরে যারা দেশশাসনের দায়িত্বে ছিল, তারা কোনটা কাজ, আর কোনটা অকাজ, সেটুকুও বুঝত বলে মনে হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে কোন বিষয়গুলো জড়িয়ে, সেগুলো বারবার গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হত।
আমি নিজে ঠিক ততখানি নাস্তিক না হলেও ধর্ম সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন। কেউ নিজের ধর্ম পালন করতেই পারেন। কিন্তু কেউ যখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন, বা ধর্মকে রাজনীতিক অঙ্গ করে তোলেন, তখন তাঁর কাজকর্ম মন থেকে মেনে নিতে পারি না। কেন জানি না, এই শাসকদলের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হত, ধর্ম এঁদের কাছে নিছকই একটা ব্যবসা। এঁরা ধর্ম দিয়ে নিজেদের অক্ষমতাকে আড়াল করতে চান।
একজন রাষ্ট্রনায়ক রামমন্দির উদ্বোধন করতে বসে যাচ্ছেন, আর সেটা একটা গোটা দেশের রাষ্ট্রীয় ইভেন্ট হয়ে উঠছে, এটা ভাবতে গেলে সত্যিই খুব রাগ হত। একজন প্রধানমন্ত্রী সমানে অন্য ধর্মকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন! আর তাঁর এই নিন্দনীয় আচরণকেই সবাই ধন্য ধন্য করছে! এ কোন ভারতবর্ষ! দেশটাকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে দেশের সরকার! এই চিন্তা বারবার তাড়া করে বেড়াত। যদিও জানতাম, এই দলটাই আবার সরকারে থেকে যাবে। কারণ, বিরোধী শক্তি সেভাবে ঐক্যবব্ধ নয়। বলতে পারেন, ভোটের আগে থেকেই কিছুটা হতাশ ছিলাম।
কিন্তু গণনার দিন বিকেলে যখন দেখলাম, উত্তরপ্রদেশে এই দল ধাক্কা খেয়েছে, অদ্ভুত একটা প্রসন্নতা এসেছিল। তারপর শুনলাম, খোদ অযোধ্যায় এই দল হেরেছে। তখন সেই তৃপ্তি আরও খানিকটা বেড়ে গেল। আমি কোনওকালেই রামভক্ত নই। রামকে কাল্পনিক চরিত্র বলেই মনে করি। কিন্তু এই ঘটনায় একটু হলেও রামের প্রতি বিশ্বাস বাড়ল। রাম যদি সত্যিই থেকে থাকেন, তাহলে তিনি এই বিধর্মীদের উপযুক্ত শিক্ষাই দিয়েছেন। তিনি অন্তত কান মুলে এটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছেন, তোরা যা করছিস কর, আমার নাম টেনে আনবি না।