সৃজন শীল
যাঁরা ভিনরাজ্যে থাকেন, তাঁদের কাছে প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, সেইসব রাজ্যে কখন ভোট আসে, কখন ভোট পেরিয়ে যায়, আমজনতা নাকি বুঝতেও পারেন না। তাঁরা ভোটের দিন ভোট দেন, তারপর নিজের নিজের কাজ নিয়ে মেতে থাকেন।
কথাটা কতটা সত্যি, কতটা অতিরঞ্জিত, বলা মুশকিল। তাছাড়া, ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই, এটা ভাল লক্ষ্মণ না মন্দ লক্ষ্মণ, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকতেই পারে। হ্যাঁ, আমাদের রাজ্যে ভোট নিয়ে উন্মাদনা বেশ ভালই। গ্রামে হোক বা শহরে, এই দুতিন মাস ভোটের আলোচনাতেই কাটবে। নেতাদের বিবৃতি–পাল্টা বিবৃতি থাকবে। একে অন্যকে আক্রমণ থাকবে। কিছুটা হযতো কর্মীদের মধ্যেও প্রভাবিত হবে। কিন্তু পাশাপাশি মিলেমিশে থাকার একটা সংস্কৃতিও তো আছে।
একই চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া চারজন হয়ত চারটে ভিন্ন দলকে ভোট দেয়। সারা বছর ধরে নানা সময়ে তুমুল তর্কও হয়। তবু বন্ধুত্বটা থেকে যায়। একই আবাসনে সবাই এক দলকে ভোট দেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। এমনকী, একই পরিবারেও ভিন্নতা। বাবা একদলকে দেন তো ছেলে অন্য দলকে। মা একদলকে, তো মেয়ে অন্য দলকে। অথচ, তাঁরা একসঙ্গেই হয়তো ভোট দিতে যান।
এই রাজ্যে ভোট অনেকটা উৎসবের মতোই। যাঁরা কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁদের অনেকে হয়তো মুখ ফিরিয়ে থাকেন। ভাবেন, আমার ভোটে কীই বা আসে যায়! কিন্তু উল্টো ছবিটাও আছে। অনেকেই ভোটের দিন নিজের এলাকায় ফিরে আসেন। শুধু তো হুজুগ নয়। শুধু তো কাউকে খুশি করা নয়। আসেন যখন, নিশ্চয় কাকে ভোট দেবেন, সেই ভাবনাটাও কাজ করে। অর্থাৎ, নিজের পছন্দ–অপছন্দকে ইভিএমে আরও সোচ্চারভাবে জানাতে চান।
দেশগঠন বলুন বা রাজ্যগঠন। একেকজন একেকভাবে ভাবেন। কারা এলে ভাল হয়, কারা গেলে ভাল হয়, সবাই নিজের নিজের মতো করে ভাবেন। হুমকি, বুথদখল, হিংসা— এগুলো ছিল, আছে, থাকবে। কীভাবে তাকে কমানো যায়, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন ভাবুক। কিন্তু বড় অংশের মানুষ নিজের ভোটটা নিজেই দিতে পারেন, এটাও ঘটনা। সেই গণতন্ত্রের শক্তি অসীম। সেই গণতন্ত্রের শক্তির ওপর আস্থা থাকুক। আস্থা থাকুক আমজনতার বিচারবুদ্ধিতেও।