বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, নেতাজিকে চেনেন!‌

মিডিয়া সমাচার

 

কাউকে মহান করতে গিয়ে অন্যদের ছোট করতে বাঙালির জুড়ি নেই। নেতাজিকে মহান করতে গিয়ে আমরা কত লোককে অহেতুক ছোট করি। আমাদের যত আগ্রহ নেতাজির মৃত্যু নিয়ে। কথা বললেই বোঝা যায়, নেতাজি সম্পর্কে এঁরা প্রায় কিছুই জানেন না। লিখেছেন সুমিত চক্রবতী।।

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই একটা পোস্ট চোখে পড়ে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ছাপা টাকায় গান্ধীজির পরিবর্তে নেতাজির ছবি ব্যবহার করা উচিত। এই ধরনের আরও একটি পোস্ট হল, চে গেভারার ছবিওয়ালা টি শার্ট না পরে, ভগত সিং-এর ছবিওয়ালা টি শার্ট পরুন।

এইসব পোস্টে চটপট লাইক ও কমেন্ট পড়তে থাকে। কিন্তু আমরা যারা নেতাজি বা ভগত সিং-এর ছবি ছাপানোর দাবিতে এত সরব তারা নেতাজি সম্বন্ধে কতটুকু জানি। কতটুকু জানি ভগত সিং সম্পর্কে? যাঁরা ধর্মকে হাতিয়ার করে ভোটের বৈতরনী পেরোতে চান, তাঁরাও কী অনায়াসে নেতাজিকে ঢাল করেন!‌ নেহরুকে ছোট করতে গিয়ে, গান্ধীজিকে ছোট করতে গিয়ে নেতাজির কথা টেনে আনা হয়। তাঁদের কাছে শুধুমাত্র এই কারণেই নেতাজির গুরুত্ব।

একবার আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনারা নেতাজিকে ধর্মীয় প্রার্থনা সঙ্গীত শুনিয়েছিলেন। এই গান শুনে ক্রুদ্ধ নেতাজি বলেছিলেন, “কে এই সব লোক দেখানো চমক শিখিয়েছে?” তিনি আরও বলেছিলেন, “আমাদের আন্দোলনের ভিত্তি হল জাতীয়তাবাদ, এর চরিত্র রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে ফেলবে না।” নেতাজি সিঙ্গাপুরের একটি মন্দিরে প্রবেশ করতে চাননি। কারণ সেই মন্দিরে সব ধর্মের মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। এমনকি নিচু জাতের হিন্দুদের প্রবেশাধিকার ছিল না। অনেক পীড়াপীড়ির পর, সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।

নেতাজির জীবনের এই সব ঘটনার কথা আমরা প্রায় কেউই জানি না। আমরা জানি না, ভগত সিং নিজে নাস্তিক ছিলেন, তিনি বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। যারা ভগত সিংকে সত্যিই শ্রদ্ধা করেন, তারা কখনই চে গেভারার ছবির বিরোধিতা করবেন না। যারা নেতাজিকে শ্রদ্ধা করেন তারা কখনই রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে ফেলবেন না।

টাকার নোটে নেতাজির ছবি ছাপানো বা টি-শার্টে ভগত সিং-এর ছবি ছাপানোর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁদের আদর্শকে অনুসরণ করা। অবশ্য এই বাংলায় নেতাজি প্রেমের একটা সহজ সূত্র আছে। গান্ধীজিকে গালাগাল দাও, তাহলেই তুমি নেতাজির অনুরাগী। এরা না পড়েছে গান্ধী, না পড়েছে নেতাজি। জিজ্ঞেস করুন, দু লাইনের বেশি বলতে পারবেন না। হায় রে, জাতির জনক নামটা কার দেওয়া, সেটাও এরা জানে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.