অজয় কুমার
অমিত শাহ এলেন। ফিরেও গেলেন। গত কদিন ধরে মিডিয়ায় যা চর্চা চলছিল, কার্যত তারই এক্সটেনশন পার্ট। তিনি আসছেন, তিনি কী বাতা দেবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
মোদ্দা কথা হল, ফের পর্বতের মুষিক প্রসব। এই একটি লোক। অকারণে তাঁকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। ওভাররেটেড বলতে যা বোঝায়, তাই।
তিনি নাকি ভোট রাজনীতির চানক্য। আচ্ছা, মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এই মহামানবের নাম শুনেছিলেন? মোদি প্রধানমন্ত্রী হলেন। তিনি নিজের রাজ্য থেকে একজন বশংবদ লোককে জাতীয় সভাপতি করে আনলেন। এতে তাঁর কৃতিত্ব কোথায়!
ছিলেন জাতীয় সভাপতি। কিন্তু ইচ্ছে হল, এমপি হবেন। প্রথমে গুজরাট থেকে এলেন রাজ্যসভায়। তারপর ১৯ এর নির্বাচনে ইচ্ছে হল, মন্ত্রী হবেন। লোকসভায় দাঁড়ালেন, জেতারই কথা, জিতলেন। এবার তাঁকে করা হল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এমন একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাঁর ইংরাজির দৌড় ওই ক্লাস সেভেন–এইট পর্যায়ের। ছিলেন দলের জাতীয় সভাপতি। হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রীত্বের লোভ, সংসদীয় মোহ বড় সাংঘাতিক জিনিস। প্রিন্সিপাল থেকে চাপরাশি হতেও তাই আটকায় না।
কিন্তু দলের ওপরও কর্তৃত্ব রাখতে হবে। তাই সভাপতি করা হল এমন একজনকে যিনি বাথরুম যেতে হলেও অনুমতি নিয়ে যাবেন। পাওয়া গেল জেপি নাড্ডা বলে একজনকে। যিনি নামেই সভাপতি। কিন্তু কোনও বিষয়েই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। চেয়ে থাকতে হয় প্রভুদের দিকে।
কলকাতার সভায় সেটা আবার পরিষ্কার হয়ে গেল। এবার অমিত শাহ তেমন কোনও সরকারি কাজে আসেননি। এসেছেন মূলত দলীয় বৈঠকে। যেখানে জাতীয় সভাপতি হাজির, সেখানে প্রাক্তন জাতীয় সভাপতিকে বার্তা দিতে হয় কেন?
প্রতিবার যেমন গোল গোল কতগুলো কথা বলে যান, এবারও তাই। বুথ স্তরে সংগঠন বাড়াতে হবে। মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। কী আর নতুন বললেন! আবহমান কাল ধরে এগুলোই তো বলা হয়ে আসছে। এর জন্য কি অমিত শাহ হওয়ার দরকার পড়ে!
বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে দেখে সত্যিই বড় করুণা হয়। আপনার সিবিআই কী করছে? এমন সীমাহীন অপদার্থতার পরিচয় দিচ্ছে কেন? কার নির্দেশে তারা ঘুমিয়ে আছে? এই সহজ প্রশ্নগুলো করার লোক কই! মোদ্দা কথা, সিবিআই, ইডি যদি সক্রিয় হত, ২১ এর ভোটে বিজেপি ক্ষমতায় চলে আসত। আসেনি শুধুমাত্র সিবিআই, ইডির চূড়ান্ত ব্যর্থতায়। এই ব্যর্থতার দায় কার? যাঁকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিরাট নেতা বলে প্রোজেক্ট করা হয়, সেই অমিত শাহর। সরকারে থাকলে অনেক হুম্বিতুম্বি করা যায়। অন্য দল থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে এনে নিজেদের সরকার বানানো যায়। এর জন্য কোনও কৃতিত্ব লাগে না। সরকারে থাকলে এমন মস্তানি সবাই দেখাতে পারে।
তিনি আগে বহুবার বলেছেন, সিবিআই এর ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করবেন না। নিজেরা সংগঠন তৈরি করুন। হয়ত ঠিকই বলেছেন। কিন্তু কর্মীরা পাল্টা বলতেই পারতেন, সিবিআই এর অপদার্থতার জবাবদিহিটা আমাদেরই করতে হয়। সিবিআই ঘুমিয়ে থাকে বলেই ‘সেটিং’ এর গল্প ছড়ায়। এই ব্যর্থতার দায় তো আপনাদেরই। আপনাদের ব্যর্থতার দায়টাও আমাদের নিতে হয়। গত লোকসভায় যেটুকু ভোট এসেছে, আপনাদের দেখে আসেনি। তৃণমূলের প্রতি রাগ ও ঘৃণার কারণেই এসেছে। আবার বিধানসভায় যে এতখানি ভোট কমে গেল, সেটা আপনাদের অপদার্থতার জন্যই। কারণ, আপনারাই নিজেদের স্বার্থে তৃণমূলকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। আপনারাই সিবিআই–ইডিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন।
মুশকিল হল, বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা কে বাঁধবেন? বাঁধার লোক নেই। তাই অমিত শাহরা আসেন। বাতেলা দিয়ে যান। আর সেটাকেই মনে হয় বার্তা দিয়ে গেলেন।