ভারত কেন হারল? কোথায় ত্রুটি ছিল? পইপই করে বুঝিয়ে দিলেন নন্দ ঘোষ।
আচ্ছা, রোহিত শর্মা ওই শটটা কেন নিতে গেল? আরে বাবা, দুটো ছয়, দুটো চার হয়ে গেছে। এত কীসের তাড়া? ওই সময় এমন শট কেউ নেয়! আমাদের ক্যাপ্টেন নাকি দলের কথা ভেবে খেলে। তাই শুরু থেকেই ঝড় তোলে। আরে বাবা, দল জিতল কিনা, সেটাই আসল। ঠিক যেমন, আগের দশটা ম্যাচে জিতেছে কিনা, কারও মনে থাকবে না।
বিরাট কোহলির ওভাবে আউট করার কোনও মানে হয়! দেখতে পাচ্ছিস, বলটা বাউন্স করছে। ওইভাবে কেউ ডাক করে! আরে বাবা, এক স্টেপ পিছিয়ে ব্যাটটা একটু কাত করে দিলেই হত। সোজা থার্ডম্যানের মাথার ওপর দিয়ে ছয় হয়ে যেত। আরেকটু অন্যরকম অ্যাঙ্গেল করতে পারলে ওটা এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে চলে যেত। তা নয়! বাবু ঠাকঠাক করবেন। এক রান করে নেবেন। সেঞ্চুরি করবেন। নাও, এবার করো। ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থাকো।
শুভমানকেও বলিহারি। তোর কী দরকার ছিল বাবু ওই সময় ওরকম শট নেওয়ার। আরে বাবা, এটা ফাইনাল। শচীনের মেয়ে না হয় গ্যালারিতে নেই। বাড়িতে বসে টিভিতে নিশ্চয় দেখছে। সবাই সেঞ্চুরি করল। ফাইনালে তুই একটা করতে পারলি না! বিয়ে একেবারে পাকা ছিল। কী জানি, শচীন হয়ত মোতেরাতেই ঘোষণা করে দিত।
রবীন্দ্র জাদেজা। বাবুর খুব অভিমান। পরের দিকে নামে। বেশি বল খেলতে পায় না। তা বাপু, ফাইনালে তো পেলি। সব ধুপধাপ উইকেট পড়তে লাগল। নায়ক হয়ে ওঠার এই তো সুযোগ। কাজে লাগাতে পারলি কই! শেষবেলায় নামবি, তখন আর পনেরো বল বাকি। বাইশ–তেইশ রান করবি। তোর জন্য এটাই ভাল। দায়িত্ব নিয়ে জেতানো তোর দ্বারা হল না।
কে এল রাহুল। আহা, কী ছন্দ। কী জমাট ডিফেন্স। একেই বলে ক্লাস। কে বলল টেস্ট ক্রিকেটের গরিমা হারিয়ে গেছে! প্রতিভা কখনও চাপা থাকে না। রাহুলের মধ্যে যে টেস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার দারুণ প্রতিভা আছে, বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে প্রমাণ করেই ছাড়ল। বড় মঞ্চেই আসল খেলা দেখাতে হয়। রাহুল বোঝে। তাই এক লাখ বত্রিশ হাজারি মোতেরাতেই টেস্ট প্রতিভা মেলে ধরল।
ছেলেটা মুড়ি মুড়কির মতো পাঁচ উইকেট নিচ্ছিল। কে? কে আবার? মহম্মদ সামি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিল। মনে হল, ফাইনালে যখন বাগে পেয়েছে, নিশ্চয় দেখিয়ে দেবে। দুটো উইকেট নিয়েওছিল। কিন্তু ও হরি। তারপরই কেমন যেন মিইয়ে গেল।
ঘরের মাঠ বলে কথা। হার্দিক ছিটকে গেছে। বুমরা নিশ্চয় কিছু করে দেখাবে। আগের ম্যাচগুলোয় ড্যাং ড্যাং করে সামি উইকেট নিয়ে গেল। ওস্তাদের মার হয়তো শেষ রাতে। এই রাতটা নিশ্চয় বুমরার। কিন্তু সেও যে এমন ধ্যাড়াবে, কে ভেবেছিল। সিরাজ তো ঠিক করেই রেখেছিল, আবার রোনাল্ডোর মতো লাফ দেবে। এশিয়া কাপ ফাইনাল আর বিশ্বকাপ ফাইনালের ফারাক যে অনেকটা। শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার ফারাকটা যে তার থেকেও বেশি।
কুলদীপের ঘূর্ণির কাছে কেউ নাকি পেরে ওঠে না। তার বল নাকি অন্যরা বুঝতেই পারে না। কিন্তু ফাইনালে এ কী ভেলকি দেখালি ভাই! হেডবাবু কুল হেডে এমন খেলে গেল, কোনও ম্যাজিক কাজ করল না। কুল রাখি না দীপ রাখি! অন্য সময় জাদেজা পটাপট উইকেট তুলে নেয়। তাকে নাকি সবাই ‘স্যর’ বলে। এই স্যরের নমুনা। যেদিন অন্যরা উইকেট নেয়, সেদিন স্যরও নেয়। যেদিন অন্যরা ডোবায়, স্যরও ডোবায়।
সব ম্যাচ জিতে এলে এমনই হয়। আরে বাবা, দেশে তো নিয়ম কানুন আছে, নাকি! মাঝে মা হয় একটা দুটো হারতে পারতিস। তাহলেও শেষ চারে যাওয়া আটকাত না। এদিকে, হারের কোটাও কমপ্লিট হয়ে থাকত। ফাইনালে নাছোড়বান্দা প্রত্যাশা তৈরি হত না। চাপ একটু হলেও কমত। এবার থেকে মাঝপথে জুয়াড়ি লাগাতেই হবে। যারা মাঝপথে দু একটা ম্যাচ হারানোর ব্যবস্থা করবে।