বেচারা অরূপ, সত্যিই তিনি বঞ্চিত, কিন্তু পাশে কেউ নেই‌!‌

অজয় নন্দী

সত্যিই তিনি চরম হতাশায় ভুগছেন। ভোগারই কথা। মুখ্যমন্ত্রী গেছেন স্পেনে। লা লিগা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলায় নাকি লা লিগার অ্যাকাডেমি তৈরি হবে। এত এত পারিষদ সঙ্গে গেছেন। সেই দলে কিনা খোদ ক্রীড়ামন্ত্রীরই জায়গা হল না!‌ তিন ক্লাবের প্রতিনিধি নিয়ে যাওয়া হল। অথচ, ক্রীড়ামন্ত্রীই কিনা ব্রাত্য!‌

অর্থাৎ, রাজ্যের খেলাধুলা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্রীড়ামন্ত্রীর মতামত বা পরিকল্পনার যে কোনও গুরুত্বই নেই, সেটা আরও একবার পরিষ্কার করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাজ একটাই, ছবি তোলার সুযোগ এলেই মুখ বাড়িয়ে দেওয়া। তিনি এটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন। অবোধের গোবধেই আনন্দ।

তিনি হঠাৎ করে প্রেস কনফারেন্স ডেকে বসলেন। মোদ্দা ইস্যু দুটি। জাতীয় দলে বাংলার ফুটবলাররা উপেক্ষিত। দুই, আইএসএলের তিনটি ম্যাচে তিনি পুলিশ দিতে পারবেন না। আসলে, এশিয়ান গেমসের দল কীভাবে গঠিত হয়, এই ব্যাপারে সম্যক ধারণা আছে বলে মনে হয় না। কারও একটা লিখে দেওয়া নোট পড়ে কয়েকটা নাম উচ্চারণ করে গেলেন। ভারতীয় দল তো দূরের কথা, বাংলার ক্লাবগুলোয় বাঙালিরা ব্রাত্য কেন, আগে সেটা ভেবে দেখেছেন?‌ এই যে দুই প্রধান ডুরান্ড কাপের ডার্বি খেলল। দুই দল মিলিয়ে কজন বাঙালি ছিলেন, গুনে দেখেছেন?‌ দুই ক্লাবকে এই উষ্মার কথা জানিয়েছেন?‌ তারপরও তো দুই ক্লাবে যখনই অনুষ্ঠান হয়, দন্ত বিগলিত করে ছবি তুলতে হাজির হয়ে যান। বাঙালি নেই কেন, এই আওয়াজটা বরং আগে নিজের শহরের দুই ক্লাবের কাছে তুলুন।

তাঁর দ্বিতীয় দাবি, আইএসএলের ডার্বি পেছোতে হবে। ওই সময় পুলিশ দেওয়া যাবে না। আচ্ছা, ইডেনে বিশ্বকাপের ম্যাচটা যেন কখন?‌ ওটাও তো সেই উৎসবের সময়েই। সেখানেও তো একইরকম সমস্যা হওয়ার কথা। সেখানে একবার বলে দেখুন তো। জানেন, কেউ পাত্তাও দেবে না। উল্টে ধাঁতানি খেতে হবে। ফুটবল নিয়ে বলাটা অনেক সহজ। মানতেই হবে, এক্ষেত্রে যুক্তি আছে। সত্যিই সেই সময় আয়োজনে কিছু সমস্যা হবে। কিন্তু এটা ঘটে করে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে হল কেন?‌ সূচি তৈরির সময় কেউ কোনও মতামত নেয়নি!‌ বাংলার কারও কোনও মতামত ছিল না‌!‌ তখনই তো আপত্তি জানানো যেতে পারত। এখনও জানানো যায়। তার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। ফেডারেশনকে বা আইএসএল কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানানো যায়। শুরুতেই ঝগড়ার জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি ছিল? যেটা আলাপ–‌আলোচনায় সহজে মিটতে পারত, সেখানে তাঁকে ছবি তোলানোর জন্য বাজার গরম করার আসরে নামনে হল।

ফেডারেশন সভাপতি বিজেপির লোক। তাঁর বিরুদ্ধে আপনার রাজনৈতিক বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য আইএফএ সচিবকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হল কেন?‌ আপনি ফেডারেশন সভাপতিকে গালমন্দ করছেন, পাশে বসে আছেন আইএফএ সচিব, এটা তাঁর কাছে কতটা অস্বস্তিকর, একবারও ভেবে দেখেছেন?‌

কয়েকমাস আগের কথা। সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না। আপনি বলে বসলেন, আইএফএ–‌তে স্বজনপোষণ হচ্ছে। নিজের ভাইকে আইএফএ–‌র সহ সভাপতি বানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাদার ইচ্ছে হল, তিনি আইএফএ–‌র সভাপতি হবেন। তাঁকে সভাপতি করতে গিয়ে আইএফএ–‌র সংবিধান বদলাতে হল। একজন ক্রীড়ামন্ত্রীর ভাই, একজন মুখ্যমন্ত্রীর দাদা। এই পরিচয়ের বাইরে এঁদের আর কী যোগ্যতা আছে?‌

নিজেও প্রতিবার বেটন কাপের ফাইনালে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, আমরা অ্যাস্ট্রো টার্ফ তৈরি করছি। পরেরবার বেটন কাপ হবে সেই অ্যাস্ট্রো টার্ফে। প্রায় এক দশক ধরে একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে আসছেন। অ্যাস্ট্রো টার্ফ এখনও দিনের আলো দেখল না। অথচ, প্রতিবার ফাইনালে পুরস্কার দিতে হাজির হয়ে যান। কতখানি অপদার্থ ও কতখানি নির্লজ্জ হলে বছরের পর বছর এই স্তরের ভাঁড়ামো করা যায়!‌
অবশ্য দোষটা তাঁর নয়। কোনও মাধ্যমিক পাস লোককে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বানিয়ে দিলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। যাঁকে তাঁকে মন্ত্রী বানিয়ে দিলেও তেমনটাই হয়।

বিষয়টা যে মুখ্যমন্ত্রী বোঝেন না, এমনও নয়। সেই কারণেই স্পেন সফরে তাঁর জায়গা হয় না। তাঁকে ফেসবুক দেখে আর কাগজ পড়ে জানতে হয়। আর হতাশ হয়ে প্রেস কনফারেন্স ডাকতে হয়। একটু ভেসে থাকার মরিয়া চেষ্টা করতে হয়। এত এত প্রাক্তন খেলোয়াড় তাঁকে ঘিরে থাকেন। একজনও বলতে পারবেন, ক্রীড়ামন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল!‌ সে গুড়ে বালি। সত্যিই, এই কষ্ট কজন বোঝেন‌!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.