অমিত ভট্টাচার্য
এবার পুজো অনেক দেরিতে। একেবারে অক্টোবরের শেষ লগ্নে। অর্থাৎ, এখনও প্রায় আড়াই মাস বাকি। এর মধ্যেই হাজির হয়ে গেল তিন–তিন খানা পুজো সংখ্যা। শুরু হয়েছিল আনন্দমেলা দিয়ে। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই এসে গেল আনন্দবাজার। তার ঘাড়ে জোরালো নিঃশ্বাস ফেলতে এসে গেল আনন্দলোক। কী জানি, এবার হয়ত বাংলা নববর্ষ থেকেই পুজো সংখ্যা বেরোতে শুরু করবে।
অনেকদিন আগে সুমনের একটা গান শুনেছিলাম, ‘সাহিত্য মরে পুজো সংখ্যার চাপে।’ তখন ঠিক বুঝিনি, এখন মনে হয়, কথাটা অনেকটাই সত্যি। এই পুজো সংখ্যার লেখাগুলোই পরে বইমেলায় বই হয়ে বেরোয়। একেকজন লেখককে নানা জায়গায় লিখতে হয়। পাইকারি হারে জোগান দিতে গিয়ে লেখার মান ঠিক থাকছে না। এ যেন অনেকটা মেগা সিরিয়ালের মতো। যেভাবে হোক, টেনে বাড়িয়ে যেতে হবে। ষাট পাতার উপন্যাস পড়ার পর মনে হয়, এত লেখার কী দরকার ছিল? এটা তো ছোট গল্পের প্লট। টেনেহিঁচড়ে গায়ের জোরে উপন্যাসের চেহারা দেওয়া হয়েছে।
আগে একটা উপন্যাসের পেছনে যে পরিশ্রম, যে মেহনত লুকিয়ে থাকত, এখন আর তা থাকছে না। কারও কারও লেখায় হয়ত থাকছে, কিন্তু সেগুলি মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। কারণ, মূলস্রোত পত্রিকায় তাঁদের জায়গা নেই। তাঁদের লেখা এমন সব কাগজে বেরোয়, যেগুলি স্টলে পাওয়া যায় না। সেগুলি পড়তে গেলে আপনাকে কলেজ স্ট্রিটের পাতিরাম বা ধ্যানবিন্দুতে যেতে হবে।
এ তো গেল লেখকদের কথা। এবার আসি পাঠকদের কথায়। দৈনন্দিন ব্যস্ততা সবার জীবনেই আছে। তার ওপর এসে যোগ হয়েছে স্মার্টফোন নামক নতুন উপদ্রব। মানুষের ধৈর্য একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। ফলে, আগে যেমন একটা পুজো সংখ্যা পাঁচ–ছদিনে শেষ হয়ে যেত, এখন পাঠকের কাছে সেই ফুরসত নেই। ফলে, রয়ে–সয়েই পড়তে হয়।
এখানেই প্রশ্ন, পাঠককে তো পড়ার সময় দিতে হবে। যেমন আমার কথাই বলি। কয়েকদিন আগে বের হল বেরোলো আনন্দমেলা। ছোট থেকেই পড়া অভ্যেস। সেই অভ্যেসবশেই আজও কিনি। সবটা না হোক, অন্তত অর্ধেক তো পড়া হয়। কিন্তু এবার সেই ফুরসতটাই পেলাম না। সাতদিনের মাথায় বেরিয়ে গেল আনন্দবাজারের পুজো সংখ্যা। স্টলে এসেছে। না নিয়েও থাকা যাচ্ছে না। আবার এটাও বেশ বুঝতে পারছি, ওটা নেওয়া মানেই আনন্দমেলার প্রতি আরও অবিচার হবে। কারণ, আনন্দবাজার পড়তে শুরু করলে আনন্দমেলার লেখাগুলোতে হাতই দেওয়া হবে না। ‘পরে পড়ে নেব’ ভেবে হয়ত সরিয়ে রাখব, তার ফাঁকেই অন্যান্য পুজো সংখ্যা হাজির হয়ে যাবে। সেই ‘পরে পড়া’ আর হয়ে উঠবে না। এরই মাঝে হাজির আনন্দলোক। মূলত সিনেমার পত্রিকা। রেগুলার সংখ্যাগুলো সবসময় পড়া হয় না। কিন্তু পুজো সংখ্যায় তো গোটা পাঁচেক ভাল মানের উপন্যাস থাকে। না পড়লেও নয়। অথচ, সময় কই। আগের দুটো যে এখনও নতুনই রয়ে গেছে।
কে কখন পুজো সংখ্যা বের করবে, সেটা একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু যেহেতু একই প্রতিষ্ঠান থেকে আনন্দমেলা আর আনন্দবাজার (পরে আসবে পত্রিকা, দেশ) বেরোয়, তাই একটা সমন্বয় রাখা দরকার। যেমন আনন্দবাজার বেরোনোর সাথে সাথেই যদি ‘দেশ’ বেরিয়ে যায়, তাহলে আনন্দবাজারের প্রতিও অবিচার হবে। তাই অন্তত পনের দিনের গ্যাপ রাখা হোক। আশা করি, আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষ বিষয়টা ভেবে দেখবেন।