প্রসূন মিত্র
মোহনবাগান সভাপতি দাবি করলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই এটিকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে আমাদের এই দাবিপূরণ হল।
প্রাক্তন এক ফুটবলার, বর্তমানে সাংসদ। তিনি দাবি করলেন, আমি সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে আবেদন করেছিলাম, মোহনবাগান নামের আগে থেকে এটিকে সরিয়ে নিন।
প্রাক্তন এক সাংসদ, বর্তমানে শাসক দলের মুখপাত্র। তিনি দাবি করলেন, আমি তো শুরু থেকেই বলে আসছিলাম, সদস্য–সমর্থকদের আবেগের কথা মাথায় রেখে এটিকে সরিয়ে নেওয়া হোক। তিনি সেই দাবি মানলেন, তাঁকে ধন্যবাদ।
ক্রীড়ামন্ত্রীর দাবি, মোহনবাগান জনতার জোড়া প্রাপ্তি। এক, আইএসএল জয়। দুই, ক্লাবের অধিকার ফিরে পাওয়া। তিনি নাকি এই নামবদলের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
বহুকাল ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘রিমুভ এটিকে’র দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছিলেন একদল সমর্থক। তাঁদেরই অনেকে ডার্বি বয়কটেরও ডাক দিয়ে বসেছিলেন। এটিকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণায় তাঁদের অনেকের উল্লাস এমন জায়গায় পৌঁছল যেন মনে হচ্ছে আইএসএল ট্রফি জয়ের থেকেও এটাই যেন বড় জয়। বেঙ্গালুরুকে নয়, তাঁরা যেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকেই হারিয়েছেন।
এরপর আসরে নামলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মোহনবাগান ক্লাবের প্রকাশ্য সভায় জানিয়ে দিলেন, আমি অরূপকে বলেছিলাম, মোহনবাগানের সঙ্গে অন্য কিছু ভাল লাগে না। তুমি সঞ্জীবকে গিয়ে বলবে, ও যেন মোহনবাগানের আগে থেকে এটিকে সরিয়ে নেয়।
কী বোঝা গেল? দলের পেছনে টাকা ঢালছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। দলের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। নাম পরিবর্তনের আসল মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। কিন্তু কৃতিত্ব নেওয়ার বেলায় কেউ পিছিয়ে নেই। সবাইকে বোঝাতেই হবে, তিনি চেয়েছিলেন বলেই পরিবর্তনটা হল। অবশ্য, ওস্তাদের মার শেষ রাতে। একেবারে শেষবেলায় মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তোরা যে যা বলিস ভাই, আমি চেয়েছিলাম বলেই নাম বদল হয়েছে। আর মুখ্যমন্ত্রী দাবি করার পর বাকি দাবিগুলো কেমন যেন চুপসে গেছে।
এত এত টাকা ঢালার পরেও স্পনসরদের কী পরিমাণ চাপ সহ্য করতে হয়, এই সামান্য ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। শুধু নামবদলের জন্য যদি এমন চাপ হয়, অন্যান্য ব্যাপারে সেই চাপের মাত্রাটা কেমন, একবার ভেবে দেখুন। কতটুকুই বা সামনে আসে! বেচারা সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তিনি এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। মোহনবাগান জনতার আবেগকে মর্যাদা দিলেন। কিন্তু কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য হাজির হয়ে গেলেন একদল লোক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও প্রকাশ্য সভায় বুঝিয়ে দিলেন, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা আসলে কিছুই নন। তিনি চেয়েছেন বলেই নাম পরিবর্তন হয়েছে। এ তো একধরনের হেনস্থাই।
আচ্ছা বলুন তো, তিন বছর ধরে মোহনবাগানের পেছনে এত টাকা ঢালার পরে এমন হেনস্থা কি তাঁর প্রাপ্য ছিল! এরপরেও কোনও কোম্পানি স্পনসর করতে এগিয়ে আসবেন!