সাজানো চিত্রনাট্য, আসলে নিচুস্তরের ভাঁড়ামি

রক্তিম মিত্র

অভিষেক ব্যানার্জি খুব প্রচারলোভী?‌ কয়েক বছর আগেও এমনটা বলা যেত না। সত্যিই তো, তিনি চাইলেই যে কোনও চ্যানেলে ওয়ান ইজ টু ওয়ান ইন্টারভিউ দিতে পারলেন। সেই চ্যানেল সব সম্প্রসারণ বন্ধ রেখে এই ইন্টারভিউ দেখাত। সাতদিন ধরে তার প্রোমো চলত। একই ইন্টারভিউ দিনে–‌রাতে চলত।

তিনি চাইলে, তাঁর সভার সব ছবি প্রথম পাতাতেই যেত। ইচ্ছে থাক না থাক, কাগজকে ছাপতে হত। এতদিন বেরোয়নি, কারণ তিনি চাননি।

ইদানীং সেই সংযমটা হয়ত আর থাকছে না। পিসির মতো তিনিও নেমেছেন গ্যালারি শো করতে। নিজেকে আর আড়াল রাখতে পারছেন না। যেভাবেই হোক, প্রচারের সার্চলাইটে আসতে চাইছেন। আর তিনি চাইলে কী না হয়!‌ তাই কাগজে ঢাউস করে ছাপা হচ্ছে। চ্যানেলে চ্যানেলে লাইভ দেখানো হচ্ছে।

কখনও তিনি মিডিয়াকে সঙ্গী করে গ্রামে ঢুকে যাচ্ছেন। লোকদেখানো সাজানো ছবি তুলছেন। সেখান থেকেই হয়ত কাউকে প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নিদান দিচ্ছেন। সেখান থেকেই হয়ত কোনও মন্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছেন। দেখাতে চাইছেন, আমিই মুশকিল আসান। আমাকে বললেই সমাধান হয়ে যাবে।

নিজের লোকসভা এলাকায় তিনি নানা ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেই পারেন। প্রশাসনকে অনুরোধ (‌আসলে, নির্দেশ)‌ দিতেই পারেন। কিন্তু কেশপুর বা কোচবিহারে তিনি কে?‌ সোজা বাংলায় বললে, তিনি কোন হরিদাস পাল?‌ তিনি সমাধান করার কে?‌ তাঁর সভা মানেই পুলিশ প্রশাসনের মাথায় হাত। নামে রাজনৈতিক সভা। কিন্তু আয়োজনে যে কোনও সরকারি সভার একশো গুন। সেইসব সভা মানেই নানা সস্তা নাটকের ফুলঝুরি। পিসি যেমন কারও দোকানে চা করতে, কারও দোকানে চপ ভাজতে শুরু করেন। আর তাঁর ভাড়া করা ফটোগ্রাফার সব কাগজের অফিসে সেই ছবি পাঠিয়ে দেন। অর্থাৎ, তিনি চাইছেন, এই ছবিটা কাল ঢাউস করে বেরোক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটাই হয়। কেউ অতিভক্তি দেখিয়ে প্রথম পাতায় নেয়। কেউ আবার ভেতরের পাতায়। মোদ্দা কথা, তাঁর কোন ছবিটা ছাপা হবে, তিনিই ঠিক করে দেন।

কৃতী ভাইপোও সেই পথেই এগোচ্ছেন। যে সস্তা প্রচার থেকে অনেকটাই দূরত্ব রেখেছিলেন, আর সেই দূরত্ব থাকছে না। তিনিও কার্যত ছবির পোজ দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। যে যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন, তার সবগুলোই একেবারে চিত্রনাট্য মেনে। একেবারে নিচুস্তরের ভাঁড়ামি। অনেক বদগুনের মাঝে অন্তত একটা গুন ছিল। এখন আর সেটাও রইল না।

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *