মুলায়ম, প্লিজ নিজেকে ‘‌নেতাজি’‌ বলবেন না

(‌বছরখানেক আগে। মুলায়ম সিং যাদবের ৮০ তম জন্মদিনে এই লেখা বেঙ্গল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর সেই লেখা ফের প্রকাশিত হল। )‌

স্বরূপ গোস্বামী

 

ছোটবেলার চেনা শব্দগুলোর মানে কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। আগে কপিল বললেই বুঝতাম কপিলদেবকে। এই প্রজন্ম কপিল বলতে বোঝে কপিল শর্মাকে। নবান্ন বলতে বুঝতাম নতুন ধানকে। এখন নবান্ন মানে, গঙ্গার পাড়ে চোদ্দ তলা একটা নীল সাদা বাড়ি। এই সব বদলে যাওয়া নামগুলো আমরা কেমন মেনেও নিয়েছি।

তবে সবথেকে মারাত্মক একটা বদল লক্ষ্য করছি গত কয়েক বছর ধরে। নেতাজি বলতে আমরা যাঁকে বুঝতাম, এখন সারা ভারত বোধ হয় অন্য কাউকে বুঝছে। এই নেতাজি হলেন মুলায়ম সিং যাদব। এখন সেই দাপট আর নেই। যোগীদের দাপটে অখিলেশ বা মুলায়ম কারও কথাই বিশেষ শোনা যায় না। তবু মুলায়মের ৮০ তম জন্মদিনে আব নেতাজি কথাটা উঠে এল। কয়েক বছর ধরেই যেন তাঁকে নেতাজি বলার ধুম লেগেছিল। অখিলেশ বলে চলেছেন, অমর সিং বলে চলেছেন, শিবপাল–‌রামগোপালরাও দিব্যি বলে চলেছেন। এমনকি আমাদের বাংলার এত বছরের মন্ত্রী কিরণময় নন্দও কী অবলীলায় মুলায়মকে ‘‌নেতাজি’‌ বলে চলেছেন।

আর মুলায়মকেও বলিহারি। তিনি এই সম্বোধনে দিব্যি তৃপ্ত। একবারও কাউকে বারণ করছেন না। বরং এই সম্বোধনে উৎসাহিত করছেন। ভাবুন তো, কয়লা মাফিয়া রমেশ গান্ধী যদি নিজেকে গান্ধীজি বলেন, তাহলে কেমন শোনাবে?‌ বা রাহুল গান্ধীকেই যদি গান্ধীজি নামে ডাকা হয়, তাহলে কেমন বেমানান লাগবে।

পারিষদরা চিরকালই পুজো করবেন, বাড়িয়ে বলবেন। সেটাই আবহমানকালের চেনা ছবি। আমাদের রাজ্যেও প্রতিদিন দেখছি। পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেটেও দিব্যি লেখা থাকছে ‘‌মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়’‌। পাড়ার রাস্তা, সেখানেও তাঁর ছবি, তিনিই অনুপ্রেরণা। আগেকার সব ফলক নিমেশে খুলে ফেলা হচ্ছে। এমনকি নন্দনেও বিশাল ফলক বসিয়ে ‘‌উদ্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’‌ বলতে হাত বা ঠোঁট কাঁপছে না। কী আশ্চর্য্য, ‘‌তিনি’‌ও বারণ করছেন না। কোনদিন হাওড়া ব্রিজে বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে এই ফলক বসলেও অবাক হবেন না।

যে পারছেন, নিজের কোলে ঝোল টেনে নিচ্ছেন। ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজের নাম বসিয়ে নিচ্ছেন। মুলায়মও ঠিক সেটাই করছেন। ‘‌নেতাজি’‌ প্রচারটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন, গোটা দেশ ‘‌নেতাজি’‌ বলতে তাঁকেই বুঝতে শুরু করেছে। এমনকি সবজান্তা গুগল সার্চে গিয়ে নিউজ বা ইমেজে সার্চ করুন। দেখবেন, মুলায়মের খবর ও ছবিই বেশি এসে যাচ্ছে। আসল ‘‌নেতাজি’‌ নিতান্তই যেন কোণঠাসা।

নেতাজির দল ফরওয়ার্ড ব্লক। তাঁদের এই নিয়ে কোনও হেলদোল আছে বলে মনেও হয় না। এই নিয়ে তাঁরা কোনও প্রস্তাব নিয়েছেন বলে শুনিনি। ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে তো আবেদন জানানো যেত, ‘‌নেতাজির নামের সঙ্গে সারা ভারতবাসীর আবেগ জড়িয়ে আছে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গৌরবজনক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্লিজ, ওই নাম ব্যবহার করবেন না।’‌ মুলায়ম মানতেন কিনা, অন্য প্রশ্ন। কিন্তু আবেদনটাও তো জানানো যেত। সেটা হয়েছে কি?‌

মমতা ব্যানার্জি নাকি নেতাজির দারুণ অনুরাগী। তিনি একবার ‘‌প্রিয় মুলায়মজি’‌কে অনুরোধ করে দেখতে পারেন।

মুলায়মজি আপনি নিজেই বলুন, ‘‌নেতাজি একজনই হয়। দয়া করে আমাকে নেতাজি বলবেন না।’‌ আপনি বললে আপনার অনুগামীরা নিশ্চয় শুনবে।

বাংলা থেকে এই আওয়াজটা মুলায়েমের কানে পৌঁছে দেওয়া যায় না ?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.