নন্দ ঘোষের কড়চা
বাংলার সাংবাদিককূলের জন্য সত্যিই খুব করুণা হচ্ছে।
এত গলা ফুলিয়ে চিৎকার। কেউ দেখাচ্ছেন, পার্থ চ্যাটার্জির নতুন বান্ধবীর হদিশ। আবার কেউ বা দেখাচ্ছেন নতুন সম্পত্তির হদিশ। এমন তারস্বরে চিৎকার, যেন বিরাট বড় কোনও ব্রেকিং।
আরে বাবা, এতদিন তোদের এই ব্রেকিংগুলো ছিল কোথায়! এখন এত মুরুব্বিগিরি করছিস, এতদিন হদিশ পাসনি কেন?
পার্থবাবুর এত সম্পত্তি কি গত সাতদিনে গজিয়ে উঠল? কোনওটা হয়ত সাত বছর আগে কেনা। কোনওটা আট বছর আগে রেজিস্ট্রি হয়েছে। তখন কেউ জানতে পারল না? এই এঁদের এত সোর্স? এই এঁরা সোর্সের বড়াই করেন?
বান্ধবীদের কথাতেই যদি আসেন, কোনও বান্ধবীই নতুন নন। কারও সঙ্গে পাঁচ বছরের, কারও সঙ্গে আট বছরের সম্পর্ক। এখন শোনা যাচ্ছে, এখানে নাকি প্রায়ই যেতেন। ওই বাগান বাড়িতে নাকি দিনের বেলায় আসতেন। অমুক জায়গায় নাকি রাতে যেতেন। এতদিন জানতে না কেন বাপু?
আসলে, বাংলা সাংবাদিকতা এখন অনেকটাই ফেসবুক নির্ভর। ফেসবুক ঘেটে এই বোদ্ধারা ভেবে নেন, তাঁরা বোধ হয় অনেক কিছু জানেন। এঁদের না আছে নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরের সম্পর্ক। না আছে পরিশ্রম। সম্পর্ক যেটুকু আছে, তা হল দাঁত কেলিয়ে সেলফি তোলা। আর সুযোগ পেলেই সেটাকে ফেসবুকে সাঁটানো। মুচকি হাসি দিয়ে একটা বার্তা, দেখেছো, আমি কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করি। দেখেছো, কার সঙ্গে আমার ছবি! হেঁ হেঁ।
অমনি লাইক, কমেন্ট পড়তে থাকে। লোকে ভেবে নেয়, সত্যিই এই সাংবাদিক কত প্রভাবশালী। কত লোকের সঙ্গে ওঠাবসা।
সম্পর্ক না হাতি! তাহলে, এতদিন জানোনি কেন বাপু?
জিজ্ঞেস করুন। এইসব সবজান্তার দল বলতে শুরু করবে, ‘জানতাম তো। কিন্তু জানলেও তো লেখা যাবে না। তাই লিখতে পারিনি। জানোই, তো সরকারের কাজে চ্যানেলের, কাগজের হাত পা বাঁধা।’
কিছুটা সত্যি। কিন্তু বিরাট বড় ধাপ্পা। জানলেও দেখানো যেত না বা লেখা যেত না, এটা আংশিক সত্যি। কিন্তু মোদ্দা কথা হল তুমি জানতে না। জানলে চায়ের দোকানে বা পরিচিত মহলে বলার লোভ সামলাতে পারতে না। কিছু না জেনেই এমন গুলতানি কর যেন কতই না জানো। আর এমন খবর জানলে তুমি বলতে না? পেট গুড়গুড় করত ভায়া।
তাহলে, মোদ্দা কথাটা কী দাঁড়াল! ইডি হাতে তুলে খাইয়ে দিলে তবে এঁরা জানতে পারেন। নইলে এঁরা ঘোড়ার ডিম জানতেন।
বলুন তো, এরপরও এই ‘সবজান্তা’ সাংবাদিকদের জন্য করুণা হয় না!
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের খুব জনপ্রিয় বিভাগ। নন্দ ঘোষ আসলে বিশ্ব নিন্দুক। তিনি সবকিছুই বাঁকা চোখে দেখেন। সবার খুঁত খুঁজে বেড়ান। তাঁর হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। আজ তিনি পড়েছেন বাংলার ‘সবজান্তা’ সাংবাদিককূল নিয়ে।)