ঠিক একমাস পর। অসুস্থ সুভাষ ভৌমিক কাউকে না জানিয়েই ভর্তি হলেন একবালপুর নার্সিংহোমে। এই পর্যায়ের একজন ফুটবলার এমন অখ্যাত এক নার্সিংহোমে! আসলে, সুভাষ হয়ত এবারও দাক্ষিণ্য নিতে চাননি। তাই মন্ত্রী–সান্ত্রীদের জানিয়ে বাজার গরম করতে চাননি।
কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী কী করলেন? আবার একটা ইভেন্টের গন্ধ পেলেন। তাঁর যদি সদিচ্ছা থাকত, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতেই পারতেন। এটার জন্য এত ঢাকঢোল পেটানোর কোনও দরকারই ছিল না। কিন্তু প্রচারপ্রিয় ক্রীড়ামন্ত্রী সবেতেই প্রচারের গন্ধ খোঁজেন। নিউ সেক্রেটারিয়েটে প্রাক্তন ফুটবলারদের মিটিংয়ে ডাকলেন। ডাকলেন তিন প্রধানের কর্তাদের। জানালেন, সরকার পাশে থাকতে চায়। ক্লাবগুলোও জানাল, তারাও সরকারি উদ্যোগের পাশে আছে। যথারীতি হাজির মিডিয়ার ব্যুম। ঘটা করে একটা প্রেস কনফারেন্স হয়ে গেল। মন্ত্রীমশাই গালভরা একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন। সব চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার হল। সব কাগজে ফলাও করে খবর হল।
সুভাষ অবশ্য শনিবার সকালের কাগজ দেখার সুযোগ পাননি। তার আগেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্য এক জগতে।
সহজ প্রশ্ন, সুভাষ ভৌমিকের চিকিৎসায় সরকার পাশে দাঁড়াতে চায়। এর জন্য এত ঢাকঢোল পেটানোর কি কোনও দরকার ছিল? প্রাক্তনদের ডেকে, কর্তাদের ডেকে ইভেন্টে পরিণত করা কি সত্যিই খুব জরুরি ছিল? সারাবছর প্রচারের হ্যাংলামি করে করে সব বিষয়কেই ইভেন্টে পরিণত করা খুব দরকার? কোথায় সেই হ্যাংলামিটা মুলতুবি রাখতে হয়, এই বোধটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন!
সুভাষ না হয় ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু তাতে কি ইভেন্ট থেমে থাকল! বরং, আরও বড় ইভেন্ট পাওয়া গেল। শ্রদ্ধা জানানোর অছিলায় ছবি তোলার, দিনভর প্রচারে ভেসে থাকার কত সুযোগ এসে গেল। বাইরে চেয়ার পেতে ক্রীড়ামন্ত্রী বসে। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন দুই প্রধান ও আইএফএ–র প্রচারপ্রিয় চার কর্তা। ফুল দিচ্ছেন, কিন্তু চোখ গুলো সেই ক্যামেরার দিকে। দুই প্রধানের যে কর্তারা নানা অছিলায় বারবার সুভাষকে কোচিং থেকে তাড়িয়েছেন, তাঁরাই কিনা ঘটা করে বলে গেলেন, সুভাষ কত আধুনিক মানের কোচ ছিলেন। যে আইএফএ গত ৩৫ বছর তাঁকে একবারও বাংলার কোচ করেনি, তাঁরাও কিনা ঘটা করে সুভাষ বন্দনা করে গেলেন।
এঁরা সম্মান জানাবেন সুভাষ ভৌমিককে? মনে করুন আশিয়ান জয়ের সেই মুহূর্তটা। গ্রুপ ছবিতে কোথাও সুভাষ ভৌমিককে খুঁজেও পাবেন না। জীবনের সেরা সাফল্যের মুহূর্তেও তিনি ক্যামেরার ফ্রেম থেকে অনেক দূরে।
আর এই কর্তারা। একজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তখনও পাশে দাঁড়ানোর নাম করে কীভাবে নিজেদের কোলে প্রচারের ঝোল টানা যায়, সেই চেষ্টায় বিভোর।
সুভাষ আর ঘরে ফিরলেন না। এইসব লোকেদের অনুগ্রহ নিয়ে আর হয়ত বাঁচতে চাইলেন না।