সাইকেল, আমাদের ছোটবেলার সেরা বিনোদন

সজল পাত্র

দিনটা প্রতিবারই নিঃশব্দে পরিয়ে যায়। এখন রোজই কিছু না কিছু দিবস। এত দিবসের কথা আগে কখনও শুনিনি। ছোট বেলায় আমাদের কাছে দিবস বলতে স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস। তারপর শুনলাম, প্রেম দিবস, ভাষা দিবস। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বছরে যতগুলো দিন, তার থেকেও বেশি দিবস। কোনও দিন চুমু দিবস, কোনও দিন পায়রা দিবস, কোনওদিন গোলাপ দিবস। কোনদিন শুনব ধুতরো দিবস, উকুন দিবস।

cycle2
এর মাঝে আজ সকালে শুনলাম, সাইকেল দিবস। কবে প্রথম দিনটা চালু হয়েছিল, কোন দেশে প্রথম উদযাপিত হয়েছিল, সাইকেল কবে প্রথম চলে, এসব চাইলে সবজান্তা গুগলে দেখা যায়। ধুর ওসব দেখে কী হবে?‌ সাইকেল নিয়ে আমার নিজের স্মৃতি কি কম পড়েছে যে, গুগল দেখতে হবে!‌
আমাদের বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে ভিডিও গেম বা মোবাইল কোনওটাই ছিল না। বিনোদনের সেরা মাধ্যম ছিল ওই সাইকেল। ক্লাস ওয়ান থেকেই সাইকেল অভিযান শুরু। তখন চালাতে পারতাম না। হাতে নিয়ে ঠেলতাম। তাতেও টাল সামলাতে না পেরে মাঝে মাঝে ওল্টাতাম। ক্লাস টুয়ে সাহস করে হাফ প্যাটেল। সেই পর্বে বেশ কয়েকবার আছাড় খাওয়ার ট্র‌্যাক রেকর্ড আছে। ক্লাস থ্রিতে ওঠার আগেই সিটে চালানো। তবে নাগাল পেতাম না। ঠিকঠাক উঠতেও পারতাম না। কোনও একটা উঁচু জায়গা থেকে সিটে উঠে প্যাটেল শুরু করতাম। তারপর বাঁ পা দিয়ে ঠেলা, একটু পরে ডান পায়ে। বারবার চোখ চলে যেত প্যাটেলের দিকে। শুধুমাত্র এই কারণেও বেশ কয়েকবার একে–‌তাকে ধাক্কা মেরেছি। সকাল নেই, দুপুর নেই, বিকেল নেই, সাইকেল পেলেই হল। দুপুর দিকে রাস্তা ফাঁকা। ফলে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ। কেউ বাড়িতে সাইকেল নিয়ে এলে আর দেখতে হচ্ছে না। তাকে না বলেই তার সাইকেল নিয়ে হাওয়া। এজন্য কতবার বকুনি খেয়েছি।

cycle3
যতদূর মনে পড়ে, আমার বয়সী ছেলেরা তখনও সিটে চড়ার দুঃসাহস দেখায়নি। কেউ কেউ বড়জোর হাফ প্যাটেল। অন্তত এই একটা ব্যাপারে বন্ধুদের থেকে খানিকটা এগিয়েই ছিলাম। কিন্তু এই এগিয়ে থাকাটা স্থায়ী হল না। ক্লাস ফোরে পা ভাঙালাম। বলাই বাহুল্য, সাইকেল থেকে পড়ে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে এক বন্ধুকে চাপিয়েছিলাম। তারপর যা হয়, এক জায়গায় ধাক্কা। দুজনেই পড়ে গেলাম। পা দু টুকরো। সারা রাত হাসপাতালে কেটেছিল। পরের একমাস পায়ে প্লাস্টার বেঁধে।
মুশকিলটা হল, এক সময় পা ভাল হয়ে গেল। কিন্তু তখনকার মতো সাইকেল চড়া বন্ধ হয়ে গেল। সাইকেলের দিকে তাকালেই শুনতে হত, আবার সাইকেল!‌ আবার পা ভাঙানোর ইচ্ছে হয়েছে!‌ বছর দুই সাইকেল ছুঁতেও পারিনি। তারপর একটু একটু করে আবার শুরু। প্রথমে লুকিয়ে চুরিয়ে। বাবা বাড়ি বা অন্যান্য আত্মীয়দের বাড়ি চলে যেতাম। মূল কারণ কিন্তু ওই সাইকেল। ক্লাস এইট নাগাদ আবার একটু একটু করে স্বমহিমায় ফিরে এলাম।
তারপর সাইকেল নিয়ে আরও কত স্মৃতি। কত দূর দূরান্তে পাড়ি দিয়েছি। এমনও হয়েছে, সকালে বেরিয়ে সেই রাতে ফিরেছি। সারাক্ষণই টো টো করে সাইকেল নিয়ে ঘুরেছি। অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই।
একটা সময়ের পর অনেক অভ্যেস হারিয়ে যায়। শেষ কবে সাইকেলে চেপেছি, আর মনে পড়ে না। কিন্তু সাইকেল দিবসে সেই হারানো স্মৃতিগুলো আবার ফিরে এল।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.