‌‌বেঙ্গল টাইমসের শারদ সংকলন

সম্পাদকীয়

ঠিক ছ’‌বছর আগের কথা। পুজোর তিন–‌চার দিন আগে হঠাৎ এল প্রস্তাবটা। একটা অনলাইন পুজো সংখ্যা করলে কেমন হয়। সেই রাতেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, একবার ঝুঁকি নিয়েই দেখা যাক। প্রস্তুতি না থাকুক, পাগলামিটা ছিল পুরোদমে। মনে আছে, মাত্র তিনদিনের মাথায় সোয়া একশো পাতার একটা শারদ সংকলন বেরিয়েছিল। একটার পর একটা মেল যাচ্ছে। দিন–‌রাত এক করে একের পর এক পাতা তৈরি করে প্রায় অসাধ্যসাধন করেছিল বন্ধুবর শুভজিৎ বোস। রাত বারোটায় হয়েছিল আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। কীভাবে মাত্র তিনদিনে পুজো সংখ্যা রাতের আলো দেখেছিল, সে কথা ভাবলে এখনও কেমন রোমাঞ্চ জাগে।

তখনও নিউজ পোর্টাল জিনিসটা ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে ‌সেখানে গজিয়ে ওঠেনি। কর্পোরেট সংস্থাগুলিও হামলে পড়েনি। তখনও ডিজিটাল মিডিয়া ‘‌বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’‌ হয়ে ওঠেনি। বাংলায় তখন হাতে গোনা কয়েকটি নিউজ পোর্টাল। তাদের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতেই ছিল বেঙ্গল টাইমস। প্রতিদিন একের পর এক ঝাঁঝাঁলো লেখা, আকর্ষণীয় ফিচার। পাঠক মহলে খুব দ্রুতই সাড়া ফেলেছিল সেই নবাগত ওয়েবসাইট।

এই ছয় বছরে কতকিছু বদলে গেল। কত পোর্টাল, কত ইউটিউব চ্যানেল গজিয়ে উঠল। কত ভুয়ো খবরের ছড়াছড়ি। কত পোর্টাল সাড়া জাগিয়েও অকালে হারিয়ে গেল। কত নতুন নতুন ভাবনা। কত নতুন নতুন ছেলেমেয়ে কাজ করছে এই ভার্চুয়াল মিডিয়ায়। শুধু লেখা নয়, প্রায় সব সাইটই ভিডিও আপলোড করছে। ফেসবুক লাইভ করছে। প্রযুক্তিকে কত সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন চটজলদি ফাস্ট ফুডের আবহে সাবেকি বেঙ্গল টাইমস তো পিছিয়ে পড়বেই। না রয়েছে কর্পোরেট আনুকূল্য, না রয়েছে যথার্থ টিম, না রয়েছে ঢাক পেটানোর প্রযুক্তিকে দারুণভাবে ব্যবহার করার মুন্সিয়ানা।

অগত্যা, বেঙ্গল টাইমসের চরিত্রেও কিছু বদল এসেছে। দৈনন্দিন খবরের বদলে বিশ্লেষণ, ফিচারে জোর দেওয়া হয়েছে। রসগোল্লার বদলে সন্দেশ–‌বরফিতে জোর। যেন তিন–‌চারদিন পরেও টাটকা মনে হয়। অনিয়মিত হয়েছে, হোঁচট খেয়েছে। ধুলো ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে এসেছে ই–‌ম্যাগাজিন। গত দেড় বছরে প্রায় দু’‌ ডজন ই–‌ম্যাগাজিন দিনের আলো দেখল। সবগুলো যে দারুণ সাড়া ফেলেছে, এমন নয়। তবে বেশ কয়েকটা সংখ্যা বেশ ভাল সাড়া পেয়েছে, পাঠকদের নির্ভেজাল প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝতে পারি।

এবার শারদ সংকলন। কিছুটা বিলম্বিত। তবে সেই বিলম্বটা কিছুটা ইচ্ছাকৃত। অন্যরা জুলাইয়ে বের করে দিল বলে আমাদের জুন মাসে বের করে দিতে হবে, এমন ছেলেমানুষির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকাই ভাল। গায়ে পুজোর গন্ধ না থাকলে কীসের পুজো সংখ্যা!‌ প্রস্তুতি ছিল। আবার শেষবেলার তাড়াহুড়োও ছিল। চাইলে কলেবর আরও বাড়ানোই যেত। কিন্তু বেশি বড় হলে আপলোড করা, শেয়ার করা, ই মেলে অ্যাটাচ করা–‌এসব যান্ত্রিক সমস্যা থাকে। পরিসর একটু কম হলে প্রযুক্তিগত সেই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়। তাই সেঞ্চুরির আগেই থেমে যাওয়া। তাছাড়া, একগুচ্ছ লেখা জুড়ে দিয়ে পাঠককে বেশি বিড়ম্বনায় না ফেলাই ভাল।

পড়ে ফেলুন। পুজোর পর বেঙ্গল টাইমসকে আরও ঝকঝকে চেহারায়, আরও নতুন আঙ্গিকে হাজির করার প্রতিশ্রুতি রইল। সেইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ই–‌ম্যাগাজিনের চেষ্টাও জারি থাকবে।

স্বরূপ গোস্বামী
সম্পাদক
বেঙ্গল টাইমস

 

‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.