দিব্যেন্দু দে
আমাদের কাছে পনেরোই আগস্ট মানে স্বাধীনতা দিবস। আনন্দের দিন। কিন্তু পাশের দেশে ছবিটা অন্যরকম। সেখানে পনেরোই আগস্ট মানে মর্মান্তিক এক হত্যাকান্ড। পনেরোই আগস্ট মানেই ভয়াবহ সেই স্মৃতি। পনেরোই আগস্ট মানে যন্ত্রনার দিন, কান্নার দিন।
১৯৭৫ সালের এই দিনেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে। শুধু তাঁকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি জহ্লাদরা। মুজিবের স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধুকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করল বাংলাদেশ। নতুন রাষ্ট্রের রূপকার বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের রাস্তায় হেঁটে দেশের নতুন সংবিধান চালু করলেন। আভ্যন্তরীন বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় কড়া হাতে তা দমন করতে চাইলেন। কিন্তু সেনাবাহনীর একটা অংশ তলায় তলায় ষড়যন্ত্র করেই চলেছিল। ঠিক ছিল, পনেরোই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যাবেন বঙ্গবন্ধু।
আগের রাত থেকেই তৈরি হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্তা। সঙ্গে পেয়েছিলেন আওয়ামি লিগের বিক্ষুব্ধ কিছু নেতাকে। তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। মুজিবের ধানমন্ডির বাড়ি ঘিরে ফেলে ঘাতকরা। ষড়যন্ত্র করে আগে থেকেই জাল বিছোনো ছিল। ফলে, তেমন বাধার মুখেও পড়তে হয়নি। ঢোকার মুখেই পেয়ে যায় মুজিব–পুত্র শেখ কামালকে। প্রথমেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হল। বঙ্গবন্ধুকে বলা হল ক্ষমতা ছেড়ে, দেশ ছেড়ে পালাতে। ভাবার জন্য কিছুক্ষণ সময় দেওয়া হল। বঙ্গবন্ধু ফোনে ডাকলেন কর্নেল জামিলকে। জামিল এসে হামলাকারি সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ঘাতকেরা জামিলের কথাও শুনল না। উল্টে গেটের মুখে তাঁকেও গুলি করল। এরপর তারা মুজিবকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মুজিব তা মানতে অস্বীকার করেন। তখন সিঁড়িতে ওঠার মুখে পেছন থেকে তাঁকেও গুলি করা হয়। মুজিবকে লক্ষ্য করে সবমিলিয়ে ৩৫ টি গুলি ছোঁড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে মুজিব লুটিয়ে পড়লেন। মুজিবের স্ত্রী তখন বলেন, আমাকেও তোমরা মেরে ফেল। তাঁর স্ত্রীর দিকে গুলি চালাতেও হাত কাঁপেনি দস্যুদের। মুজিব পুত্র শেক জামাল ও দুই পুত্রবধূকে খুঁজে বের করে খুন করা হল। দস বছরের ছোট্ট ছেলে রাসেও নিস্তার পেল না মৃত্যুর হাত থেকে।
বেঁচে গিয়েছিলেন দুজন। মুজিবের দুই কন্যা। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তাঁরা দুজনেই তখন ছিলেন জার্মানিতে। সেই হাসিনা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে আজও পনেরোই আগস্ট পালন করা হয়। যে দিনটা আমাদের কাছে উল্লাসের, সেটাই ওপার বাংলায় কান্নার।