আশির দশকেও পাহাড় উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে। কীভাবে সামাল দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু? তাঁর জন্মদিনে সেই কথাই উঠে এল বেঙ্গল টাইমসের প্রতিবেদনে। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।
আমি তখন অনেকটাই ছোট। রাজনীতি বোঝার মতো বয়স হয়নি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম জ্যোতি বসু, দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম রাজীব গান্ধী, জ্ঞান বলতে এইটুকুই। আটের দশকের মাঝামাঝি। তখন একবার দার্জিলিং গিয়েছিলাম। গরমকালেও ঠান্ডা লাগে, শোয়েটার পরতে হয়, ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করেছিলাম। মনে আছে ম্যালের কথা।
মনে আছে, টয় ট্রেনে চড়ে নেমে এসেছিলাম। পাহাড়ের বুক চিরে আস্তে আস্তে ছুটছে সেই ট্রেন। অনেকে ছুটতে ছুটতেই সেই ট্রেনে উঠে পড়ছে, নেমে যাচ্ছে। কিশোর মনে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। ফিরে এসে কত বন্ধুকে বলেছিলাম সেই টয় ট্রেনের কথা।
তার কয়েক মাস পরেই শুনলাম, পাহাড় নাকি উত্তপ্ত। সেখানে নাকি গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন শুরু হয়েছে। আলাদা রাজ্য চাই। আমার কিশোর মন সেদিন বলে উঠেছিল, আলাদা রাজ্য হলে কি আর বেড়ানো যাবে না? যদি বেড়ানো যায়, তাহলে আলাদা রাজ্য হলেই বা ক্ষতি কী? কত রাজ্য তো আছে।
অনেকদিন ধরে এই আন্দোলন চলেছিল। কখনও গাড়ি পুড়ছে, কখনও কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। এমন নানা খবর ভেসে আসতে লাগল। রোজই এর সঙ্গে তার মিটিং হচ্ছে। কাগজে তখন প্রায় রোজ সুবাস ঘিসিংয়ের ছবি। এই লোকটা কী চায়? যদি রাজ্যই চায়, তাহলে এত ঝামেলা করার কী দরকার? এসব কত প্রশ্ন তখন মনের মধ্যে ভিড় করত। কাগজে নানারকম বিবৃতি। কিছু বুঝতাম, অধিকাংশটাই বুঝতাম না।
অনেকদিন পর, কাগজে দেখলাম, সবাই বেশ হাসিমুখে। জ্যোতি বসু, রাজীব গান্ধী, বুটা সিং, সুবাস ঘিসিং। সবাই মিলে একটা চুক্তি করলেন। গোর্খা হিল কাউন্সিল তৈরি হল। পাহাড় শান্ত হল। নয়ের দশকেও পাহাড় গেছি। আর অশান্তির ছোঁয়া পাইনি। নতুন শতকেও গেছি। দিব্যি ঘুরে এসেছি। সমস্যা হয়নি। ২০০৫ পর্যন্ত পাহাড়ে আর আগুন জ্বলতে দেখিনি। বিমল গুরুংদের দাপট বাড়ার পর আবার অশান্ত হয়েছে।
ঘিসিংয়ের আমলে কী দুর্নীতি হয়েছে, কোথায় উন্নয়নের কাজ কেমন হয়েছে, তা জানি না। তবে এটুকু জানি, পাহাড়টা শান্ত ছিল। সেখানকার মানুষগুলো মোটামুটি শান্তিতেই ছিলেন। রাজ্য অকারণে নাক গলাতে যায়নি। সত্তরবার পাহাড়ে যাওয়ার ঢাক পেটাতে হয়নি।
সেই আশির দশক। দীর্ঘ আলোচনার পর শান্তির দিশা পেয়েছিল পাহাড়। ‘পাহাড় হাসছে’ জ্যোতি বসুকে কখনও এমন ঢাক পেটাতে হয়নি।
&********